বাসর রাতে কি করতে হবে
নিজের জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর জন্য মানুষ বিবাহ জীবনে আবদ্ধ হয়। মানুষ কখনোই একা একা বসবাস করতে পারেনা। নিজের জীবনে সুখ দুঃখ ভাগ করার জন্য স্বাভাবিকভাবেই ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধভাবে বিয়ে করতে হয়। আজকে আমরা বাসর রাতে কি করতে হবে বা বাসর রাতের আমল দোয়া সমূহ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
আজকে আমরা বাসর রাতে কি করতে হবে এবং বাসর রাতে দোয়া সমূহ এবং আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেল ভালো লাগবে।
বাসর রাত কি?
সবার আগে বাসর রাত সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করছি। বিয়ের পর নব দম্পতি প্রথম মধুময় সময়কে সাধারণত বাসর বলা হয়। এ সময়টিতে দুইজন নতুন মানুষ বৈধভাবে একে অপরের কাছাকাছি প্রথমে আসে।
তখন অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। এই সময়কেই বাসর রাত বলা হয়। মূলত বিয়ের দিন এর রাতকে বাসর রাত বলে ধারণা করা হয়। তবে অনেক ধর্ম বা অনেক এলাকায় বিয়ের দিন একসাথে থাকতে দেয়া হয় না বরং একে কাল রাত বলা হয়। বিয়ের একদিন পরে স্বামী এবং স্ত্রী একসাথে থাকতে দেয়।
বাসর রাতে কি করতে হবে
বাসর রাত কি তা আমরা জেনেছি এখন আমরা জানবো বাসর রাতে কি করতে হয়। নিচে বাসর রাতে কি করতে হয় তা উল্লেখ করা হলো-
নামাজ আদায় করা- বিয়ের পর প্রথম স্বামী-স্ত্রী প্রথম সাক্ষাতে দুই রাকাত নফল নামাজ আগে পিছে দাঁড়িয়ে আদায় করবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু বলেন স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। অথবা তারা একসঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন।
নামাজের সময়টি যদি রাতের বেলা হয় তবে কেরাত একটু উচ্চস্বরে পড়বে। আর যদি দিনের বেলায় হয় তবে নিম্নস্বরে পড়বে।
নামাজের পর দোয়া পড়া- নামাজের পর জীবনের বরকত এবং কল্যাণের জন্য উভয়ে দোয়া পাঠ করবে। স্বামী দোয়া পাঠ করবে এমনি স্ত্রী আমিন বলবে। দোয়াটি হলো-
“আল্লাহুম্মা বারিক লি বিআহলে ওয়াবারিক লাহু ফিয়াহ আল্লাহুম্মা আজ মা বায়না নামা জামাতা দিনু ওয়া ফারকিন বায়না নাই সাফার রাখতা ইলা খাইরান”
অর্থ- হে আল্লাহ আমি আপনার জন্য আমার পরিবারে হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত তিনিও আমার ভিতর ও বরকত দিন। পরিবারের জন্য হে আল্লাহ আপনি তাদের থেকে আমার রিজিক দেন এবং আমার থেকেও তাদেরকে রিজিক দান করুন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণের সঙ্গে একসাথে রাখুন এবং আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথে বিচ্ছেদ ঘটান।
নববধূর কপালে হাত রেখে স্বামীর দোয়া পাঠ করা- বিয়ের পর একত্রে উভয়ে নামাজ আদায় করবে এবং স্বামী স্ত্রী তার স্ত্রীর কপালে হাত রেখে এই দোয়া করবে। এভাবে দোয়া করা সুন্নত আর দোয়াটি হল-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা আলাইহি ওয়াউজু বিকাম মিন শারীহা ওয়াসার রিমা জাবাল তাহা আলাইহি”
অর্থ- হে আল্লাহ আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন। যত অকল্যাণ রয়েছে এবং দ্রুত কল্যাণের স্বভাব চরিত্রে আপনি দেখেছেন তার থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
এরপর দুয়ার পর সম্ভব হলে একে অপরকে দুধ অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াবে- একে অপরের সঙ্গে ভালোবাসা পূর্ণ কথাবার্তা বিনিময় করবে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হবে। উভয়ের মনে ভয় ভীতি সংকোচ হতাশা কিংবা বিষন্নতা দূর করবে। আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা পূর্ন পরিবেশ সৃষ্টি করবে। নিজেদের জন্য দোয়া করা নব দম্পতি প্রথম দোয়াগুলা ছাড়াও নিজেদের দাম্পত্য জীবনে কল্যাণ এবং বরকতময় কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করতে পারেন।
চাইলে একসঙ্গে বা উভয়ে আলাদা আলাদা দোয়া করতে পারেন।
সহবাসের দোয়া পড়া- স্বামী এবং স্ত্রী সহবাসের সময় তারা উভয়ে তাদের কল্যাণের জন্যই দোয়াটি পড়বে। যাতে রয়েছে শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন। এই দোয়াটি পড়ার সুন্নত ও দোয়াটি হল-
“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার আল্লাহুম্মা সুন্নিব্নাস সায়ানা হাসান নিবি শয়তান আমার রাজাকটানা”
অর্থ- আমি আল্লাহর নামে শুরু করেছি হে আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমাদের যদি কোন সন্তান দান করেন তাকেও শয়তানে হাত থেকে রক্ষা করুন।
বাসর রাতের আমল এবং সুন্নত
এখন আমরা বাসর রাতের আমল এবং সুন্নত কি কি তা আলোচনা করব। নিচে বাসর রাতে কি আমল করতে হবে তা উল্লেখ করা হল-
- বাসর ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে কোমলতা মোয়ী আচরণ করা
- সম্ভব হলে প্রথম রাতে স্ত্রীর মহরানা আদায় করা
- স্বামী এবং স্ত্রী একসঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা
- নফল সালাতের পর ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য বরকতময় দোয়া করা
- সম্ভব হলে একে অপরকে দুধ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ানো
- একে অপরের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা
- স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে তার জন্য দোয়া করা
- একে অপরের সঙ্গে ভালোবাসা পূর্ন ভাব বিনিময় করা
- দাম্পত্য জীবনে সৎ ভাবে সংসার করার নিয়ত করা
- আল্লাহকে ভয় করা
- সহবাস করতে চাইলে সহবাসের দোয়া পড়া
বাসর রাতের নামাজ পড়ার নিয়ম
বাসর রাতে স্বামী এবং স্ত্রীকে নিজেদের সংসার জীবনের কল্যাণ কামনা করার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ আদায় করার নিয়ম হিসেবে বিভিন্ন হাদিস পাওয়া যায়। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রঃ বলেন স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়িয়ে যাবে।
অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। রাতের বেলা যদি তারা সালাত আদায় করে তাহলে কেরাত উচ্চস্বরে পড়বে আর যদি দিনের বেলায় সালাত আদায় করে তবে নিম্নস্বরে আদায় করবে। এছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন ভালোবাসা এবং সুসম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।
আর ঘৃণা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। কারণ আল্লাহর হালাল করা বিষয়ে শয়তান তোমাদের মাঝে ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায়। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নিকট আসলে তাকে বলো সে যেন তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করে।
নেক সন্তান লাভের দোয়া
বাসর রাতে কি করতে হয় সে সম্পর্কে আমরা উপরে জেনেছি এখন নেক সন্তান লাভের দোয়া সম্পর্কে জানব। দোয়া গুলো হলো-
“রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনা তাইয়্যেবা”
অর্থ- হে আমার রব তোমার পক্ষ থেকে সন্তান দান কর নিশ্চয়ই তুমি দোয়া কবুলকারী।
বাসর রাত সম্পর্কে ইসলামের বিধান
মানব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে দেওয়া রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিয়ে। আল্লাহতালা প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ব্যক্তিদের উপর বিয়েতে ফরজ করে দিয়েছেন। বিয়ে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দম্পতির অংস হলো বাসর রাত।
নতুন জীবনে আবদ্ধ হওয়া বিবাহ বন্ধনে প্রতিটি দম্পতির জীবনে কাঙ্খিত এবং গুরুত্বপূর্ণ রাতে ইসলামের বিধানগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
- একে অপরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো
- একসঙ্গে সালাত আদায় করা
- স্ত্রীর মাথা ডান হাত রেখে দোয়া পড়া
- নিষিদ্ধ কাজ অর্থাৎ যে কোন ঋতুবতি নারীর সাথে সঙ্গম করা থেকে বিরত থাকা
- সঙ্গম ছাড়া স্ত্রীর সাথে যা কিছু করার অনুমতি রয়েছে তা করা
- তার সঙ্গে সময় কাটানো
- সঙ্গমের সময় দোয়া করা
- সঙ্গমের পর অজুবা গোসল করে পবিত্র হওয়া
- স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো সময় গোপন তথ্য অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করা
- বিবস্ত্র হয়ে সঙ্গম না করা
- ছোটখাটো ভুলের জন্য তাকে তিরস্কার না করা
- হানিমুনে বা ঘুরতেই তাকে নিয়ে কোথায় যাবেন তা ঠিক করা
- মোহরানা বাকি থাকলে মোহরানা নেওয়া দিয়ে দেওয়া
- দুজনে খোশ গল্প করা
- জীবনে ভালোবাসার রাত তাই ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখা
- এই ভালবাসা আল্লাহকে উৎসর্গ করবেন তা ঠিক করা
বাসর রাতে কি করতে হবে
আজকে আমরা বাসর রাতে কি করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। আশা করছি বাসর রাতে কি করতে হবে আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। বাসর রাতে কি করতে হবে আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং বাসর রাতে কি করতে হবে আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ