নারীদের কবরের আজাব
এক হাদীসে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন মিরাজের রাতে তিনি যখন জাহান্নাম দেখেছিলেন সেখানকার বেশিরভাগ জাহান্নামি ছিলেন মহিলা। নারীদের জান্নাতে যাওয়া যেমন সহজ তেমনি জাহান্নামে যাওয়াও সহজ। নারীদের কবরের আজাব কেন বেশি হবে এবং কি কি কারণে নারীদের কবরে আজাব হবে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়।
আজকে আমরা নারীদের কবরের আজাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – স্বপ্নে গোরস্থান দেখলে কি হয় | স্বপ্নে কবর দেখলে কি হয় | সত্য স্বপ্ন কিভাবে বুঝবো?
কি কি কারনে নারীদের কবরের আজাব বেশি হবে?
- পিতা মাতার অবাধ্য হলে
- স্বামীর অবাধ্য হলে
- স্বামীর আনুগত্য প্রকাশ না করলে
- কুচ্ছা কারী ও পরনিন্দুক
- গীবত করা
- মিথ্যা কথা বলা
- বেপর্দায় চলা
- জিনাহ করা
- প্রস্রাব থেকে উত্তম রূপে পবিত্র না হলে
- সুদখোর হওয়া
- সময় মত নামাজ আদায় না করা
- মাহ হারাম মেনে না চলা
- দান সাদকা না করা
- হিংসা ও পরনিন্দা করা
- পবিত্রতা অর্জনে আলসেমি করা
- ছোট ছোট কাপড় পড়া
- সাজসজ্জা করেও অন্য পুরুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট করা
- নিজের লজ্জাস্থান এবং ইজ্জতের হেফাজত না করা
- মাথার খোপা উটের কোচের মত করে করা
কবরের আজাব সম্পর্কে হাদিস
১। নবী করীম সাঃ বলেন- কবর পরকালের প্রথম ঘাঁটি কেউ যদি এখান থেকে মুক্তি পায় তাহলে পরবর্তী ঘাটিগুলো তার জন্য সহজ হবে। আর কেউ যদি এখান থেকে মুক্তি না পায় তাহলে পরবর্তী ধাপগুলো তার জন্য আরো কঠিন হবে। (তিরমিজি হাদিস ২০৩০৮)
২। কোন এক ব্যক্তি যখন মারা যায় তখন সে বারযাকে প্রবেশ করে এবং পুনরুত্থান পর্যন্ত সে সেখানেই থাকবে। এরশাদ হয়েছে এরপর যখন তাদের কারো মৃত্যু আসবে তখন সে বলবে হে আমার রব আমাকে ফিরিয়ে দাও যাতে আমি যেগুলো রেখে এসেছি সেগুলোর ব্যাপারে নেক আমল করতে পারি। কখনো নয় এটি একটি কথার কথা সেটা বলবে আর মানুষের পশ্চাতে রয়েছে পুনরুত্থান পর্যন্ত। (সূরা মুমিনুন আয়াত ৯৯ থেকে ১০০)
৩। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহিস সালাম তাই এই দোয়া করতেন হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। (বুখারী ২৮২২)
৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন দুই প্রকার মহিলা জাহান্নামী মানুষ আসবে যাদেরকে আমি আমার চোখে দেখতে পাচ্ছি না। একপ্রকার হচ্ছে ওইসব নারী যারা কাপড় পড়েও উলঙ্গ থাকবে তারা সাজসজ্জা করে অন্য পুরুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরা অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট থাকবে। দুই তাদের মাথার খোপা খোজের মত হবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকি তারা জান্নাতের সুঘরানো পাবে না। অথচ জান্নাতে সুঘ্রাণ ৫০০ বছর রাস্তার দূরত্ব থেকে অনুভব করা যাবে।
৫। হাদিসে আছে ছয় শ্রেণীর নারীরা কঠিন আজাব ভোগ করবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বর্ণনা করেন। আমি মেরাজের রজনীতে ছয় শ্রেণী নারীকে জাহান্নামের কঠিন আযাব ভোগ করতে দেখেছি। এক ওই নারী যে মাথার চুল খুলে বেপর্দা হয়ে ঘর থেকে বের হয়, দুই ওই নারী যেটা স্বামীর সাথে তর্ক করে এবং স্বামীকে সম্মান করে না, তিন ওই নারী যে তার স্বামী থাকা সত্ত্বেও পর পুরুষের সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয্, চার ওইনারী যে অপবিত্র থাকা সত্ত্বেও পবিত্রতা অর্জনে অলসতা করে এবং নামাজের অমনোযোগী হয়, ৫ ওই নারী যে মিথ্যা কথা বলে এবং গীবত করেয ৬ যে অন্যের সুখ দেখে হিংসা করে এবং উপকার করে খোঁটা দেয়।
আরো পড়ুন- ৭০০+ অর্থসহ আরবী নামের তালিকা
নারীদের শাস্তির কারণ ও বিস্তারিত বর্ননা
রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বর্ণিত জাহান্নামে নারীদের শাস্তির ৬টি দিক রয়েছে। ছয়টি দিক সম্পর্কে জানার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু সালামের কন্যা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু শাস্তির কারণ জানতে চাইলে মহানবী সাল্লাল্লাহু সালাম বলেন-
নারী শাস্তির প্রথম কারণ হলো- যে মহিলা কে মাথার চুল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সাজায় ভোগ করতে দেখেছিলাম সে চলার পথে পর পুরুষ থেকে নিজের চুলকে ঢেকে রাখত না নগ্ন মাথায় পর পুরুষকে দেখানোর জন্য চুল ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে মহিলাদেরকে মাথা ঘাড় ও বুক মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে নির্দেশ করেছেন। তাই নারীদের বলা হচ্ছে তারা যেন কঠোরভাবে পর্দার হুকুম মেনে ঘরে বা বাইরে চলাফেরা করে নিজেদেরকে ভয়াবহ আজাব থেকে রক্ষা করে।
নারী শাস্তির দ্বিতীয় কারণ- যে সকল মহিলাদেরকে জিব্বা দ্বারা ঝুলন্ত অবস্থায় জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করতে দেখা গেছে তাদের ওই শাস্তির কারণ হলো তারা কথাবার্তা স্বামীকে কষ্ট দিতে এবং তাদের জবান থেকে শশুর শাশুড়ি আত্মীয় স্বজন এমনকি প্রতিবেশী পর্যন্ত নিরাপদ থাকত না। এমন অনেক মহিলা আছে যারা খুবই নামাজী কিন্তু মুখের ভাষা খুবই জঘন্য এই শ্রেণীর নারীরা নামাজ-কালাম পরা সত্ত্বেও অশ্লীল ভাষি হওয়ার কারণে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন মুসলমান হচ্ছে ওই ব্যক্তি যার হাত মুখ এবং আচরণ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।
নারী শাস্তির ৩য় কারণ- অবৈধ সম্পর্ক হচ্ছে নারী স্বাস্থ্যের তৃতীয় কারণ। মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যে মহিলাকে স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন উইনারে ছিল বিবাহিতা। সে বিবাহিত হওয়া সত্বেও তারপর পুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী মহিলাকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন। অন্য আয়াতে জিনাকারী মহিলা এবং জিনার পরিবেশ সৃষ্টিকারীণী মহিলা সম্পর্কে কঠিন আজাব ও শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন।
নারী শাস্তির চতুর্থ কারণ- নারী শাস্তির চতুর্থ কারণ হচ্ছে ইবাদতে অনিহা। মহানবী সাল্লাল্লাহু সালাম এরশাদ করেন জাহান্নামের স্বীয় পদযুগল বক্ষে এবং হস্ত-নার কপালে স্থাপিত অবস্থায় সাজা প্রাপ্ত মহিলারা দুনিয়ায় ফরজ গোসল হওয়ার পরবর্তী পবিত্রতা অর্জন উদাসীন ছিল। নামাজে যথা সময়ে পালন করা তো দূরের কথা বরং নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত নিয়ে উপহাস করত।
গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা করে নেয়া উত্তম। অহেতুক অলসতা বসত দেরি করে কঠিন রোগ আক্রান্ত সম্ভাবনা থাকে।আর এভাবে থাকা হারাম।
নারী শাস্তির পঞ্চম কারণ- পর নিন্দা এবং মিথ্যা হচ্ছে নারী শাস্তির পঞ্চম কারণ। মুখ আকৃতির সুকর এবং শরীরের বাকি অংশ গাধার রুপে রূপান্তরিত অবস্থায় শাস্তি ভোগ করে এমন মহিলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম বলেন এই মহিলা পরনিন্দ্য মিথ্যা বলতো অভ্যস্ত ছিল। পরনিন্দ্য এবং মিথ্যা বলা মহাপাপ পবিত্র কুরআনে পরনিন্দা কে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং জাহান্নামে শাস্তি থেকে বাঁচতে সকলকে মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
নারী শাস্তির ষষ্ঠ কারণ- হিংসা ও খোটা দেওয়া রাসুল সাঃ জাহান্নামে যে মহিলাকে মুখের ছবি কুকুর আকৃতির এবং তার মুখে ঢুকে আগুন ঢুকে মলদার দিয়ে বের হতে দেখেছেন। সে ছিল হিংসুক ও খোটা প্রদান কারি। হিংসা একটি মারাত্মক ধরনের রোগ যা মানুষের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন হিংসা হতে দূরে থাকো কেননা হিংসা নেকিকে ধ্বংস করে যেমন আগুন শুকনো কাঠকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে।
তেমনি উপকার করে খোটা দেওয়া সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম এরশাদ করেন তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহতালা কিয়ামতের দিন অনুগ্রহ দৃষ্টি দিবেন না এদের মধ্যে একজন হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে অপরকে অনুগ্রহ বা উপকার করে খোটা দেয়।
নারীদের কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়
- প্রতিদিন বেশি বেশি করে মৃত্যুর স্মরণ করতে হবে
- নামাজে এবং অন্যান্য সময় তওবা করতে হবে
- তাওহীদে বিশ্বাস করে অটল থাকতে হবে এবং
- আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ ইসলামী রাষ্ট্রের পাহারা দেয়া ইত্যাদি কাজী নিযুক্ত রাখতে হবে
- নিয়মিত সূরা মূলক পাঠ করতে হবে
- আল্লাহর কাছে নিজের পূর্বের গুনাহ সম্পর্কে মাফ চাইতে হবে
- এবং বিশেষ কোন জুমার দিন অথবা এমন কোন মৃত্যু চাইতে হবে যে মৃত্যুতে কোন হিসাব নেওয়া হয় না
- বেপর্দায় চলা যাবেনা
- ফরজ ইবাদত গুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে
- বেশি বেশি দান সদকা করতে হবে
- ইস্তেগফার করতে হবে
- নিজের ইজ্জতের হেফাজত করতে হবে
- সামীর সেবা ও আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে
- বেশি বেশি দান করতে হবে
- হিংসা পর নিন্দা করা যাবেনা
কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আসসাদি জাহান্নামা ওয়া আউজুবিকা মিন আযাবিল কবরী ওয়াআউজু বিকা মিন ফিতনাতিল মাছিহি দাজ্জালি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনা তিল মাহিয়া ওয়াল মামাত”
অর্থ- হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন মরণের বিপদ আপদ থেকে।
নারীদের কবরের আজাব
আজকে আমরা নারীদের কবরের আজাব কেন বেশি হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি নারীদের কবরের আজাব আর্টিকেলটি মুসলিম ভাই বোনদের অনেক ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- স্বপ্নে গোরস্থান দেখলে কি হয় | স্বপ্নে কবর দেখলে কি হয় | সত্য স্বপ্ন কিভাবে বুঝবো?
- ৭০০+ অর্থসহ আরবী নামের তালিকা
- সৌদি মুসলিম ছেলেদের নাম, সৌদি আরব ছেলেদের ইসলামিক নাম