দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম ও ক্রিমের নাম

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম

আমাদের শরীরে যেসব চর্ম রোগ খুব বেশি আক্রমণ করে তাদের মধ্যে দাউদ অন্যতম। দাউদ রোগ একটা ছোঁয়াচে রোগ এবং এই রোগটি কম বেশি সবারই হয়ে থাকে। তাই অনেকেই দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম বা ট্যাবলেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে থাকে। আজকে আমরা তাদের জন্যই দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম এবং দাউদ হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আরো পড়ুন – চোখ ওঠা রোগ কেন হয়, চোখ ওঠা থেকে মুক্তির উপায়

দাদ বা দাউদ কি?

দাউদ বা দাদ একপ্রকার চর্মরোগ। এটি একটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে শরীরের চামড়ার উপরে দেখা যায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরে যেকোনো জায়গায় এই দাদ বা দাউদ হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দাউদ বা দাদ এর ইংলিশ নাম হলো রিংটোন বা টিনিয়া।

দাউদ হবার কারণ

  • অপরিচ্ছন্নতা
  • নিয়মিত পড়ার কাপড় পরিষ্কার না করা
  • ভিজা কাপড় পরিধান করা
  • শরীর অতিরিক্ত ঘামের কারণে
  • স্যাতস্যাতে জায়গায় ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারে
  • অন্যের ব্যবহার করা জামা কাপড় ব্যবহার করা
  • চিরুনি গামছা তোয়ালে বিছানা চাদর ব্যবহার করা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম তাদের ক্ষেত্রে দাউদ হতে বেশি লক্ষ্য করা যায়

দাউদ চেনার উপায়

প্রথমে একটি ছোট লাল গোটার সৃষ্টি হয় এবং খুবই চুলকানো ভাব দেখা দেয়। এটি অতি দ্রুত বৃত্তাকারে ছড়াতে থাকে অনেকটা চাকা বা রিংয়ের আকার ধারণ করে। এই চাকা বা রিং এর কিনারা গুলো কিছুটা উচু ও লাল রঙের হয়। কখনো কখনো এর ভিতরে আঁশ দেখা যায় আবার কখনো কখনো ছোট ছোট পানি যুক্ত ফুশকুড়ি ও দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে এই গোল দাউদের পরিধি ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং অতিরিক্ত চুলকানির কারণে জ্বালা পোড়ার সৃষ্টি হয়। দাউদ মাথায় আক্রান্ত হলে চুল উঠে যায় আর নখে আক্রান্ত হলে ভঙ্গুর হয়ে যায়।

দাউদ আক্রান্তের স্থান

আমাদের শরীরে বিভিন্ন অংশেই দাউদ দেখা দিতে পারে। যেমন-

  • কুচকি
  • মাথার ত্বক
  • হাত পা পায়ের পাতা
  • এমনকি হাত পায়ের নখেও দাউদের আক্রমণ হতে পারে

আক্রান্ত স্থান ভেদে দাউদের লক্ষণীয় ভিন্নতা আসতে পারে। যেমন দাউদ কখনো আস্তে আস্তে বড় হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায় আবার কখনো কখনো একসাথে অনেকগুলো দেখা দিতে পারে।

দাউদ রোগ কিভাবে ছড়ায়

দাদ বা দাউদ একটি সংক্রমণ রোগ। দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম জানার আগে এটি কিভাবে ছড়ায় তা জানতে হবে।  এটি মূলত ট্রাইকোফাইটন প্রকারের ফাঙ্গাস এর জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়। এটি মূলত তিন ভাবে মানুষের শরীরে ছড়ায়-

১। আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা তার ব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শ থাকলে। যেমন চিরুনি তোয়ালে বিছানা চাদর বা জামা কাপড়।

২। দাউদ আক্রান্ত প্রানী সংস্পর্শ থাকলে। যেমন- কুকুর, বিড়াল, গরু ছাগল, ঘোড়া

৩। দাদ রোগের জীবাণু আছে এমন পরিবেশ বিশেষ করে স্যাতস্যাতে স্থা্নে থাকলেন

দাউদ এর চিকিৎসা

দাউদ রোগের চিকিৎসায় এন্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে এর চিকিৎসা নির্ভর করে শরীরের কোন কোন স্থানে ইনফেকশন হয়েছে ইনফেকশন কতটা গুরুতর তার উপর নির্ভর করেই চিকিৎসা করা হয়। তবে মলম ব্যবহারে্র পাশাপাশি নিজের শরীরের অন্য কোন স্থানে কিংবা বাড়ির সদস্যদের মধ্যে দাউদ রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করা উত্তম। সাধারণত এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা মলম ointment শ্যাম্পু সলিউশন লাগালে দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই দাউদের সংক্রমণ থেকে নিরাময় লাভ করা যায়। আর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে ওষধ খেতে হয়। বিশেষ করে এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত।

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম ও ক্রিমের নাম এবং দাম

  • Lucazol cream 10 gm – ৯৬ টাকা
  • Elvina cream 10 gm – ৮০ টাকা
  • Lulizol cream – ৯৬ টাকা
  • Mycofin cream – ৬৫ টাকা
  • Lucazen cream – ৯০ টাকা
  • Terbex cream – ৩১ টাকা
  • Infud cream – ৬৫ টাকা
  • Lulitop cream- ৮০ টাকা
  • Davison- ৫৫ tk
  • afun- ৩৫ tk

দাউদের সাবান বা শ্যাম্পুর নাম

যদিও দাউদের ওষুধ গুলো খুবই ধীরে ধীরে শরীরে কাজ করে। সাধারণত বাজারে দুইটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান পাওয়া যায়। কিটোকোনাজল এবং ললিকোনাজল। এই সাবান নিয়মিত ইউজ করে পাঁচ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আর যাদের দাউদের পরিমাণ বেশি তারা কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এটি সাধারণত গোসলের পনের মিনিট আগে ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে এবং গোসলের সময় পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এতে করে কিছুটা সময় লাগলেও চার থেকে পাঁচ মাস একটানা সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

দাউদের সবচেয়ে ভালো ট্যাবলেট এর নাম

  • Flucon 150gm- ২৫ টাকা
  • Fluconazole 150gm- ৮০ টাকা
  • Falcon 150mg- ২২ টাকা
  • Flucoder 150 mg- ২২ টাকা
  • Diflu 150 mg – ১১৮ টাকা
  • ট্যাবলেট রাইমিল- ৩৩ টাকা
  • ক্যাপসুল- ইন্ট্রাকল
  • ক্যাপসুল- ফ্লুগান
  • Lulinox cream- ১৬২ টাকা

অতিরিক্ত দাউদ হলে করণীয়

  • আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখুন
  • পরিষ্কার ঢেলেঢালা কাপড় পরুন
  • ব্যক্তিগত ব্যবহার করা জিনিস অন্যকে ব্যবহার করতে দিবেন না
  • আক্রান্ত স্থানে তেল ক্রিম লোশন কসমেটিক সাবান ইত্যাদি ব্যবহার পরিহার করুন
  • আক্রান্ত স্থান স্পর্শ করার পর সাবান দিয়ে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন
  • সংক্রমণের জায়গাটা যতটা সম্ভব খোলা রাখুন
  • প্রতিদিনই পরিহিত কাপড়-চোপড় গেঞ্জি মোজা আন্ডারওয়্যারের প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করুন
  • আক্রান্ত স্থান কুসুম গরম পানি ও ভালো অ্যান্টিসেপটিক সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে মেডিসিন ব্যবহার করুন
  • পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ আসার পর ধুয়ে ফেলুন
  • আক্রান্ত স্থানে কখনোই নখ লাগাবেন না

দাউদের ঘরোয়া চিকিৎসা

সাধারণত দাউদ হলে ত্বকের উপরে গোলাকার সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুলকানি হয়। দাউদ হলে দ্রুত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম  বাজারে পাওয়া গেলেও তবে এটি সমাধানে এন্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহারে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু উপাদান ব্যবহার করে দ্রুত দাদ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

নারিকেল তেল- দাউদ একটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন তাই সংক্রমন রোধে নারিকেল তেল কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এই নারিকেল তেলে থাকে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ। এছাড়া নারিকেল তেল চুলকানি বা জ্বালাপোড়া কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। তাই দাউদ হলে সেসব জায়গায় নারিকেল তেল হালকা করে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

অ্যালোভেরা জেল- এলোভেরা তে কিন্তু দাউদ নির্মূল করার উপাদান রয়েছে। ভালো যে কোনো আয়ুর্বেদিক ব্র্যান্ডের অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত সংক্রমিত জায়গায় লাগিয়ে দেখতে পারেন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই দাউদ সেরে যাবে।

হলুদ- হলুদ অ্যান্টিসেপটিক এবং এন্টিফাঙ্গাল গুণসমৃদ্ধ এই হলুদ ব্যবহারেও দাদ থেকে সহজেই নিস্তার নিতে পারে। এজন্য প্রথমে হলুদ বাটা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন নিয়মিত হলুদ ব্যবহারে দাদ দ্রুত সেরে যাবে।

নিমপাতা- যে কোন ধরনের জীবাণু ধ্বংস করতে নিম পাতা ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। নিম পাতার রস নিয়মিত ক্ষতস্থানে লাগানোর মাধ্যমে আপনি দাউদের খুব বেশি উপকার পাবেন।

তুলসী পাতা- তুলসী পাতা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের জন্য অনেক উপকারী। এ তুলসী পাতায় রয়েছে ইনক্লেমেটরি এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান। যা ছত্রাক প্রমোশনের ক্ষেত্রে খুবই উপকারি। তুলসী পাতা নিয়মিত দাউদ সংক্রামিত স্থানে ব্যবহার করার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ হবে।

করলা পাতা- করলা অনেকেই খেতে পছন্দ করে না কিন্তু করলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। করলা যেমন স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ঠিক তেমনি পাতা ও অনেক উপকার করে। অনেকেই জানে না করলার পাতা ব্যবহারেও দাউদ সারানো যায়। নিম পাতার মত করোলা পাতা বেটে নিয়ে দাউদ সংক্রমিত অংশে লাগান।  কতক্ষণ রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবেন ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাবেন।

দাউদ প্রতিরোধের উপায়

  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা
  • সবসময় সুতি কাপড় পরিধান করা
  • ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা
  • অতিরিক্ত ঘামের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঠান্ডা বা বাতাস চলাচল রয়েছে এমন পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা
  • শরীর ঘেমে গেলে তা ধুয়ে মুছে শুকিয়ে নেওয়া
  • পরিধানে কাপড় বা অন্য জিনিস অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি না করা
  • অনেকদিন পুরনো কাপড় না ধুয়ে পরিধান না করা
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন সব খাবার খাওয়া
  • কখনো ভিজা কাপড় পরিধান না করা
  • চর্ম রোগ আছে এমন ব্যক্তি থেকে সব সময় দূরে থাকা

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম সাবধানতা

দাদ হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই মলম বা ঔষধ ব্যবহার করে থাকে। যেহেতু বর্তমান সময়ে স্কিন ক্যান্সার খুব বেশি দেখা যায়। তাই যত্রতত্র কোন মলম ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লাগানো উচিত নয়। যার ফলে প্রাথমিকভাবে লাল বা চুলকানো কিছুটা কমে গেলেও এতে ছত্রাক আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে এই মলম স্কিনে কাজ করে না।

এত করে ছত্রাক নাশক ঔষধের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। যথেষ্ট ইচ্ছামতো ওষুধ সেবনের কারণে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ত্বকে লক্ষ্য করা যায়। ত্বক পুড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে লক্ষ্য করা যায়। তাই দাউদ হলে খুব শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করলে দাউদ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম ডাক্তারই সাজেস্ট করবেন।

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম

আজকে আমরা দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম ও ক্রিমের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম আর্টিকেলটি আপনাদের খুবই ভালো লেগেছে। লেখাটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত এবং পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply