দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়
দাঁত আমাদের শরীরের সেনসিটিভ একটি অঙ্গ। দাঁতের ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক হয়। বিভিন্ন কারণেই আমাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়। দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় কি এবং দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাই আজকে আমরা দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় কি এবং দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত আলোচনা করব।
আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
মাড়ি ফুলে যায় কেন
মাড়ি ফুলে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যাকে ইংরেজিতে গ্রাম ডিজিজ বলা হয়। ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন ছত্রাক সংক্রমণ পুষ্টির ঘাটতি গর্ভাবস্থা ভিটামিন সি এর ঘাটতি বা দাতে বিভিন্ন ধরনের খাবার আটকে থাকা। মাড়ি ফুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
মাড়ি ফুলে যাওয়ার লক্ষণ
দাঁতের বিভিন্ন সংক্রমণের কারণে মাড়ি ফুলে যায়। মাড়ি ফুলে যাওয়া লক্ষণগুলো হল-
- মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া
- ফুলে যাওয়া মাড়ি ধরলেই ব্যথা করা
- পুজ বের হওয়া
- মুখ থেকে দুর্গন্ধ হওয়া
- খাওয়া গিলতে কষ্ট হওয়া
দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া কিসের লক্ষণ
বিভিন্ন কারণে আমাদের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়। সেসঙ্গে অনেক ব্যথাও থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় জিনজিভাইটিস। এটি হল মাড়ি সংক্রমণজনিত একটি রোগ। দাঁতের সঠিক যত্নের অভাবে দাঁতের উপর ব্ল্যাক এর একটি আস্তর পড়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে এটি থাকার ফলে মাড়িতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। নিচে দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার লক্ষণগুলো বর্ণনা করা হলো। মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া, মাড়ি অনেকটা ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে ক্রমাগত রক্তপাত হওয়া, মাড়িতে প্রবল ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস আসা, ঠান্ডা এবং গরম খাবার খেলে দাঁত শিরশির করা।
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে ঘরোয়া ভাবে অনেক উপায় এই দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া কমানো যেতে পারে। যেমন-
অ্যালোভেরা জেল- অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা মাড়ির সমস্যা সারাতে দারুন কাজ করে থাকে। একটা বাটিতে দুই থেকে তিন চামচ এলোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে মাড়িতে লাগানো যেতে পারে। কিছুক্ষণ রেখে কুলি করে ফেললে মাড়ির ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
লবণ পানি- দাতের যেকোনো ব্যথার সমস্যায় লবন পানি কুলি করা খুবই কার্যকরী। এতে করে দাঁতের ব্যথা থেকে সুস্থ হওয়া যায়। লবণে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি এন্টিসেপটিক উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিকারী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
লেমন গ্রাস তেল- অ্যান্টি স্ট্রেঞ্জ থাকায় এই তেল মাড়ির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগের ঝুঁকি কমাতে লেমোন ক্রাশ তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া দাঁত এবং মাড়িকে শক্তিশালী করতেও তেল ব্যবহার করা যায়। এক কাপ পানিতে কয়েক ফোটা লেমন গ্রাস তেল মিশিয়ে নিতে হবে এবং এই মিশ্রণটি দিয়ে কুলি করতে হবে।
দুই থেকে তিনবার দিনে করতে পারেন।
হলুদ- হলুদে আছে কারকেউমান যার এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি কিলোমিটার উপাদান সমৃদ্ধ এই উপাদান গুলো ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতে অনেকভাবে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমিয়ে মুখের অন্যান্য সমস্যা হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে।
সামান্য পানির সঙ্গে আধা চামচ পরিমাণ হলুদের মিশ্রনে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। ৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে এই মিশ্রণটি মাড়িতে আলতো ভাবে মালিশ করতে হবে। এরপর গরম পানি দিয়ে কুলি করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
টি ব্যাগ- ফুটন্ত পানির মধ্যে একটি ব্যাগ দুই থেকে তিন মিনিট ঢুকিয়ে রাখতে হবে। এরপর তা তুলে ঠান্ডা করুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মাড়ীর কাছে চেপে ধরে রাখতে হবে। এরপর হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করে ফেলতে হবে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখের ভিতরে সুস্থতা বজায় রাখতে খুবই সাহায্য করে।
তিলের তেল- তিলের তেল মাড়ি ফোলা এবং মুখের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ব্যবহার করা বেশ কার্যকর। এটি একটি পরীক্ষিত এবং বিশ্বস্ত পদ্ধতি হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। এই সনাতন আয়ুর্বেদিক পদ্ধতির মুখের ভিতরের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ তিলের তেল মুখে নিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ খুলে করে পরিষ্কার করুন। সবশেষে হালকা করে দাঁত ব্রাশ করে নিন।
টি ট্রি অয়েল- এতে আছে অ্যান্টিবায়োটিক এবং এন্ডটি লিমিট এর উপাদান যা মাড়ির ফুলানো আর দ্রুত ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। একগ্লাস গরম পানিতে কয়েক ফোটা টি ট্রি তেল মিশিয়ে মাউথ মাউথয়াস হিসেবে দিনে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সতর্ক থাকবেন কোনভাবেই এই পানি পেটে যাতে না যায়। এতে করে পেটে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
জোয়ান- জোয়ান রয়েছে এমন উপাদান যা অনুভূতি নাশক হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। এতে রয়েছে অন্তিম প্রেমিটারি উপাদান। জোয়ানের বীজ হালকা টেলে নিন যেন সুগন্ধ বের হয় এরপর এটি গুড়া করে নিন। এরপর কয়েক ফোটা সরিষার তেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
বাচ্চাদের মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাড়ি থেকে দাঁতের প্রদাহ সবসময় বেশি লক্ষ্য করা যায়। যাকে বলে লালপাইটিস। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাচ্চার মাকে বেশি সচেতন হতে হবে। প্রেগনেন্সির নয় মাস মাকে ভালোভাবে খাবার গ্রহণ করতে হবে। সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এমনকি বাচ্চাকে খাওয়ার আগে এবং পরে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। নিজে এবং বাচ্চার মুখ সবসময় পরিষ্কার না রাখলে বাচ্চাদের মাড়ি ফুলে যেতে পারে।
মাড়ি ব্যথা হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত
আমাদের দাঁতের মাড়ি ব্যথা হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত তা হল-
- ভাত
- আলু ভর্তা
- স্যুপ
- মাছ
- এভোকাডো
- মটরশুঁটি
- ছোলা
- পাস্তা
- ওটমিল
- ডিম
- পনির
- ভালোভাবে রান্না করা সবজি
- কমলা
- লেবু
- পেয়ারা
- ভিটামিন সি সম্রদ্ধ খাবার
মাড়ি ব্যথা হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়
বিভিন্ন খাবারে ফলে দাঁতের উপর প্রভাব পড়ে তাই দাতের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। নিচে খাবারের তালিকা উল্লেখ করা হলো-
- আইসক্রিম
- মসলাযুক্ত খাবার
- দাঁতে আটকে যায় এমন খাবার
- বীজ শস্য
- মাংস
- টকফলের রস
- টমেটো
- সস
- কফি
- পানীয়
- কোমল পানীয়
- অতিরিক্ত গরম খাবার
দাঁতের মাড়ির ব্যাথার ট্যাবলেট
বিভিন্ন পেইন কিলার খাওয়ার মাধ্যমে মাড়ের ব্যথা কমাতে পারেন। নিচের মাড়ি ব্যথার ট্যাবলেট উল্লেখ করা হলো-
- Fenamic 500
- Fenamic 250
- Nala one
- Algin
- Rolac
- Tory 90
- Tab exiloc 20
- Moxacil 500
- Amodis 400
মাড়ি ফুলে যাওয়ার রোধে করণীয়
বিভিন্ন কাজ যদি আমরা নিয়মিত করি দাঁতের যত্ন নেই তাহলে অবশ্যই মাড়ি ফুলে যাওয়ার মত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। মাড়ি ফুলে যাওয়া রোধে করণীয় কি তা নিচে উল্লেখ করলাম-
- মুখের দাঁত ও মাড়িতে সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- রাতে শোয়ার আগে এবং সকালে খাবার পর দাঁত ব্রাশ করতে হবে
- দিনে নিয়মিত দুইবার ব্রাশ করতে হবে
- মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- মুখে দন্ত্য পাথর জমলে স্কেলিং করতে হবে
- সব সময় মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে
- চকলেট বিস্কেট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে
- খাওয়ার পর মুখে কুলি করতে হবে
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়
আজকে আমরা দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও দাঁতের মাড়ি ব্যথা হলে কি কেউ ঔষধ খেতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়,ঔষধ
- মুখে ব্রণ কমানোর উপায় – ব্রণ দূর করার ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট
- বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির দোয়া, কোন রোগে কোন দোয়া পড়বেন?