টনসিল ফোলা কমানোর উপায়
সাধারণত যাদের কোল্ড এলার্জি রয়েছে যারা ঠান্ডা কিছু খেতে পারেন না বা ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন না তাদের বেশিরভাগ টনসিলের সমস্যা হতে লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই টনসিল ফোলা কমানোর উপায় এবং টনসিলের ঔষধ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা টনসিল ফোলা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির দোয়া, কোন রোগে কোন দোয়া পড়বেন?
টনসিল কি?
টনসিল হলো পোস্ট ইকোনালীর মুখোমুখি অবস্থিত লিম্ফয়েড অঙ্গগুলির একটি সেট যা ওয়াল্ডারের টনসিলার রিং নামেও পরিচিত। এডিনয় টনসিল দুটি টিউবার টনসিল দুটি পেলাটাইম টনসিল এবং লিঙ্কুয়াল টনসিল সমন্বয়ে টনসিল গঠিত হয়।
অঙ্গগুলো অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপ অপ্রচলিত হলেও টনসিল শব্দটি দ্বারা সাধারণত পেলা টাইম টনসিল কে বোঝায়। এ টনসিল মানুষের গলার উভয় পাশে অবস্থিত।
টনসিল ইনফেকশন কি?
টন-সিলাইটিস শিশু এবং বাচ্চাদের বেশি হলেও এটি যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। এই ইনফেকশন সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি হল তীব্র বা হঠাৎ প্রদাহ ২। দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ। কখনো কখনো টনসিলের চারপাশে ফোড়া হতে পারে।
যেটাকে বলা হয় পেরিটোন সেলার এক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ লোকাল এন্সেস এর মাধ্যমে পুজ বের করে দিতে হয় এবং পরবর্তীতে ১ থেকে দেড় মাস পর কাউন্সিল অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়।
টনসিল কেন হয়?
টনসিল ফোলা কমানোর উপায় জানার পাশাপাশি টনসিল হবার কারন জানা দরকার।
- পুষ্টির অভাব
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- আইসক্রিম খাওয়া
- ফ্রিজে রাখা শীতল পানি বেশি পান করা
- মুখ ঠিকমতো পরিষ্কার না রাখা
- ক্ষতিকর ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
- টনসিলের ইনফেকশনে কারণ হতে পারে
- সাথে বাসস্থান ঠান্ডা আবহাওয়া শীতের প্রকোপ বেশি হলে
- গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যায়
টনসিল এর প্রধান লক্ষন সমূহ
টনসিল ফোলা কমানোর উপায় জানার পূর্বে টনসিল এর প্রধান লক্ষন সমূহ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা উচিত। এই পর্যায়ে আমরা টনসিল এর প্রধান লক্ষন গুলো জেনে নিবো।
- গলা ব্যথা
- তীব্র বা মাঝারি ধরনের গলা ব্যথা
- মাথাব্যথা
- জ্বর
- খাবার খেতে কষ্ট
- মুখ হা করতে অসুবিধা হওয়া
- কানে ব্যথা হওয়া
- মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া
- কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যাওয়া
- মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া
- স্বরভঙ্গ
- গলায় ঘা সহ
- ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া
- গলা ফুলে যাওয়া
টনসিলের চিকিৎসা
টনসিলের চিকিৎসার বিকল্প হল দুইটি। এক এন্টিবায়োটিক দুই অপারেশন। যদি ব্যাকটেরিয়া গত সংক্রমণের কারণে টনসিলের ব্যথা হয়ে থাকে। তাহলে ডাক্তার আপনাকে অবশ্যই এন্টিবায়োটিকের কোর্স দেবেন। সংক্রমণের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাওয়া বা দেহের ব্যাথা ছড়িয়ে যাওয়া আটকানোর জন্য ওষুধটির কোর্স সম্পন্ন করা উচিত।
সার্জারি যে সমস্ত পুনরাবৃত্তি মূলক সংক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত টনসিলাইটিস সাধারণ এন্টিবায়োটিকের চিকিৎসায় কোন ভাবেই কমানো যায় না। সে ক্ষেত্রে সার্জারি করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে সার্জিক্যাল উপায় টনসিল গুলোকে অপসারণ করা হয়।
টনসিল ইনফেকশন হলে করণীয়
- প্রচুর পরিমাণে কুসুম গরম পানি এবং তরল খাবার খেতে হবে
- সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে
- যতদিন না সুস্থ না হয় মুখের হাইজিন বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে
- বারবার কুলি করতে হবে
- সাধারণ স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে
- লবন পানি খাওয়া যেতে পারে
- গলায় কোনোভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না
- যেহেতু তীব্র ব্যথা থাকে জ্বর থাকে সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল বা আইপ্রুভেন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন
- চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে
টনসিল ভালো হতে কতদিন লাগে?
নিয়মিত ঔষধ খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিলে এবং নিয়ম মেনে চলে টনসিল আক্রান্ত রোগী সাধারণ ১ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সাধারণত অস্ত্র পা পাচার বা অপারেশন করতে হতে পারে।
যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় বা এর জন্য অন্য কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে টনসিল ফেলে দেওয়াই ভালো। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
টনসিল হলে কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা
টনসিল হলে এই খাবার এড়িয়ে চলবেন। চলুন দেখে নেই টনসিল হলে কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা
- অ্যালকোহল
- টমেটো বা টমেটো সস
- আচার
- সিগারেট
- টক জাতীয় ফল
- বেশি ঝাল জাতীয় খাবার
- অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার
- চর্বিযুক্ত খাবার
- ফাস্টফুড
- শক্ত খাবার
- কাঁচা সবজি
টনসিল হলে যেসব খাবার খেতে হবে
টনসিলের সমস্যা হলে নিচের খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এই খাবারগুলো টনসিলের ব্যথা কিছুটা হলেও উপশম করবে।
- লবণ পানি
- গরম স্যুপ
- মধু ও লেবু
- মধু গ্রিন টি
- দুধ এবং হলুদ
কখন টনসিলের অপারেশন করতে হয়
- দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক টনসিলাইটিস হলে
- বা টনসিল বড় হয়ে গেলে
- শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে
- নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে
- টনসালে যদি ফোড়া বা পেরিটনসিলার হয়
- যদি বছরে ৩-৪ বারে বেশি ইনফেকশন হয়
- এসব কারণ ছাড়াও যদি ক্রনিক কাল ইনফেকশন হয়
- স্টাইলয়েড প্রসেস অপারেশনের সময় না থাকলে অপারেশন করা যায় না
টনসিলের ঔষধ
টনসিল চিকিৎসা শুরুতে সাধারণত ব্যথা কমানোর ঔষধ দিতে হয়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে যদি টনসিলের সমস্যা হয় তাহলে চিকিৎসকরা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ অবশ্যই পূরণ করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের টনসিলের মেডিসিন পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অসহযোগী ও সেবন করা উচিত নয় তবে টনসিল ফোলা কমানোর উপায় এর ঔষধের মধ্যে অন্যতম হলো-
- Lebac 500mg
- Cephradine 500 mg
- E fix 100 mg
- Rofiuclave 250 mg
- HXR
- Dexiland 30
- Vifaas Tablet
- Viodine mouth wash
- Moxacil capsule
- Tridosil Tablet
ঘরোয়া ভাবে টনসিল ফোলা কমানোর উপায়
বর্তমানে ঘরোয়া ভাবে টনসিল ফোলা কমানোর উপায় রয়েছে সেগুলো হলো-
গরম পানি মধু দিয়ে খাওয়া- টনসিলের সমস্যা সমাধান করতে চাইলে এক গ্লাস গরম পানিতে এক ছোট চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই পানি কুসুম গরম থাকতেই ধীরে ধীরে খেতে হবে। এর মাধ্যমে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন মধুতে রয়েছে টিভি ব্যাকটেরিয়াল প্রপারটিজ। যার কারণে টনসিলের সংক্রমণ কমতে শুরু করে।
লবণ গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা- টনসিল সহ যে কোন গলার সমস্যার জন্য প্রধান ওষুধ হলো লবণ দিয়ে গরম পানি গড়গড়া করলে গলায় ফোলা ভাব কমে যায় এবং ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ১ গ্লাস গরম পানিতে এক চিমটি নুন দিতে হবে।
হিউমিডি ফায়ারে সমস্যা মিটবে- পরিবেশ শুষ্ক হলে গলা ব্যথার সমস্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই টনসিলের সমস্যা কমাতে চাইলে ঘরে হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহার করতে হবে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ালে টনসিলের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। রাতে শোয়ার সময় হিউমিডি ফায়ার চালিয়ে ঘুমিয়ে যান।
তুলসী ও মধুর মিশ্রণ- টনসিলের সমস্যা কমাতে তুলসী ও মধুর মিশ্রণ খাওয়ানো যেতে পারে। তুলসীতে রয়েছে গলার প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা। অপরদিকে মধুতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ। তাই তুলসী মধুর মিশ্রণ খাওয়ালে গলা ব্যথা সহ গলার বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
হলুদ দুধ- এক গ্লাস গরম দুধে অল্প একটু হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে খুব সহজে গলায় টনসিলের ব্যথা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও গলা ব্যথা গলা ভেঙ্গে গেলে এই উপায়ে গলা ব্যথা ভালো করা সম্ভব।
টনসিল প্রতিরোধে করণীয়
টনসিলের সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য প্রতিরোধ করতে হবে। টনসিল প্রতিরোধ করার জন্য-
- দিনে কয়েকবার হাত পরিষ্কার করতে হবে
- নিজের খাবার পানিও বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়
- এছাড়া যারা টনসিলের সময় ভুগছেন তাদের কোন জিনিস ব্যবহার করা উচিত নয়
- কোন ঠান্ডা জাতীয় জিনিস খাওয়া উচিত নয়
- গরমে ঘেমে গেলে সাথে সাথে ঘাম মুছে ফেলা উচিত
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
কয়েকটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন-
- জর না কমলে
- গলা ব্যথার ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলে
- ধীরে ধীরে শরীরে ক্লান্তি বেড়ে গেলে
- গলা খুব বেশি ফুলে গেলে
- গলা ব্যথার কারণে একদমই খেতে না পারলে
- এ ধরনের পরিস্থিতিতে অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
টনসিল ফোলা কমানোর উপায়
আজকে আমরা টনসিল ফোলা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি টনসিল ফোলা কমানোর উপায় আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা
- জ্বর, ঠান্ডা, সর্দির ট্যাবলেট এর নাম
- একাকিত্ব নিয়ে ক্যাপশন, ছন্দ, বানী, উক্তি