জ্বরে আনারসের উপকারিতা
জ্বর আমাদের সাধারণত কমবেশি সবার হয়ে থাকে। জ্বর হলে মুখ তেতো হয়ে যায় যার ফলে কোন কিছুই খেতে ভালো লাগে না। তবে অনেকেই জ্বর এর মুখে আনারস খাওয়ার কথা বলে। তাই অনেকেই জ্বরে আনারসের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে জানতে এবং আনারসের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান।
আজকে আমরা জ্বরে আনারসের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আনারস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
তীব্র জ্বরে আনারসের উপকারিতা
আনারস এমন একটি প্রাকৃতিক ফল যার সম্পর্কে সাধারণত কমবেশ আমরা সবাই জানি। আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা জ্বরে আমাদের মুখের রুচি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং আনারস অনেক ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। জ্বরের সময় অনেকেই আনারস খেয়ে থাকে।
নিচে জ্বরে আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো-
জ্বরে নির্মূলে সাহায্য- জ্বরের সময় আনারসের উপকারিতা অনেক। আনারস একটি শক্তিশালী জ্বর নির্মূলক হিসেবে কাজ করে। এটি জ্বরের সময় খেলে মুখে রুচি বাড়ে এবং মুখের তেতো ভাব দূর হয়ে যায়। তাছাড়া জ্বরের কারণে শ্বাসকষ্ট পেট এবং বুকের উপর প্রভাবিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে আনারস খাওয়া উচিত।
সহজে হজম হওয়া- জ্বরের সময় আমাদের পাঁচনের সমস্যা হতে পারে। এতে আনারস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের হজম শক্তি স্বাভাবিক রাখতে আনারস অনেক উপকারি ফল।
মুখের রুচি বৃদ্ধি- জ্বর মুখে তেতো ভাব হলে কিছুই খেতে ভালো লাগে না। সাধারণত জ্বর হলো শরীরের ইনফেকশনের কারণে অর্থাৎ শরীরে কোথাও ইনফেকশন হলে তা জ্বরের মাধ্যমে বুঝা যায় যে শরীরে কোন কোথাও ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। তাই এ সময় মুখে রুচি একদমই কমে যায়। কোন কিছু খেতেই ভালো লাগে না। আনারস খেলে এ সময় মুখের রুচি বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য খাবারও খাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি- আনারসে বিভিন্ন প্রকার এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা জ্বরের সময় রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমকে আরো বেশি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ক্ষয়কারক এবং ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। এমন সমস্যা থেকে রক্ষা দেয় এবং এ সময় বিভিন্ন ফ্লু বা ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
আনারসের উপকারিতা
আনারস একটি রসালো তৃপ্তিকর সুস্বাদু ফল। ফলটিতে আঁশ এবং ক্যালরি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ক্যালসিয়াম ফসফরাস এবং পটাশিয়াম আছে। কোলেস্টেরল এবং চর্বি মুক্ত বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আনারসের কোন জুড়ি নেই। আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে জানলেও আনারসের আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তা অনেকেই জানেনা। নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-
পুষ্টির অভাব পূরণ- পুষ্টিগুনে ভরপুর আনারস খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এবং ফসফরাস। এসব ভিটামিন আমাদের শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সবার আনারস খাওয়া উচিত।
হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে- আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে আনারসের কোন জুড়ি নেই। আনারসের রুমেদ নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে যা হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই আনারস খাওয়া যেতে পারে।
ভাইরাসজনিত ঠান্ডা এবং কাশি প্রতিরোধ- আনারসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় তা ভাইরাসজনিত ঠান্ডা এবং কাশি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া জ্বর এবং জন্ডিস প্রতিরোধেও আনারস বেশ উপকারী ফল। এছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া গলা ব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবেও আনারসের রস খাওয়া যেতে পারে।
শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে- আনারসে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং আশ থাকে। এতে কোন ধরনের ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমাণে আনারস খেলে বা আনারসের জুস পান করলে শরীরে ওজন কমাতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই আনারস ওজন নিয়ন্ত্রণে আপনার নিত্য দিনের সঙ্গী হতে পারে।
তাছাড়া দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় না এই আনারস। ফলে শিরা ধমনীর মধ্য দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়।
চোখের যত্নে আনারস- আনারস চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। আনারসে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন প্রতিদিন আনারস খেলে এ ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে সুস্থ থাকে আমাদের সুন্দর চোখ।
দাঁত ও মাড়ি- দাঁত এবং মাড়ির সুরক্ষায় আনারস অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আনারসে ক্যালসিয়াম থাকাটা দাঁতের সুরক্ষায় ভালো কাজ করে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ খুবই কম হয়। এছাড়া মাড়ির যে কোন সমস্যার সমাধানে আনারস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের যত্নে আনারস- আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা আমাদের শরীরের শক্তির যোগান দেয়। এতে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে কুচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়া দেহের তৈলাক্ত এবং ব্রণসহ সকল ধরনের রূপ লবণ্য বৃদ্ধিতে আনারসের জুড়ি নেই।
হাড় ক্ষয়ের রোগ প্রতিরোধ- জ্বরে আনারসের বিভিন্ন উপকারিতা এর পাশাপাশি আনারসের আরো অনেক উপকারিতা আছে। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের শরীরের হাড়ের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত রাখে। তাই খাবার তালিকায় প্রতিদিন আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যা জনিত যে কোন রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
কৃমিনাশক হিসেবে- অনেকেরই পেটে অতিরিক্ত কৃমি হয় ক্রিমির ট্যাবলেট খেয়েও কৃমি ছাড়ে না। তারা কৃমিনাশক হিসেবে আনারস খেতে পারেন। নিয়মিত আনারসের রস খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। কৃমি দূর করতে সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে আনারসের রস খাওয়া উচিত।জ্বরে আনারসের উপকারিতা ছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা আছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে- আনারসে যে সব উপাদান রয়েছে তা মানবদেহের কোষের উপর বিরুপ ক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দেশের আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে ফ্রি রেডিকেল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধতে পারে না।
রক্ত পরিষ্কার- দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে এই ফল বাধা দেয়। ফলে শিরা ধমনী রক্ত জমে না যাওয়ার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে থাকে এবং আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিণ্ডকে কাজে সহায়তা করে।
আনারসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আনারসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা উচিত।
- আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
- আনারসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গুন থাকলেও এটি সবার জন্য সঠিক নয়।
- অনেকেই আনারসের এলার্জির সমস্যা চুলকানি ইত্যাদি থাকতে পারে তাই খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- আনারস একটি এসিডিক ফল তাই খালি পেটে এই ফলটি খেলে প্রচন্ড পেটে ব্যথা হতে পারে।
- তাছাড়া দুধ এবং আনারস একসাথে খাওয়া যায় না।এটা কুসংস্কার সাধারণত দুধ একসাথে খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
- রক্ত তরল করার জন্য যে ঔষধ বানানো হয় এসপিরিন তাতে আনারসের রস ব্যবহার করা হয়।
- এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে তাই যাদের কাটাছেঁড়া সমস্যা রয়েছে তারা আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
জ্বরে কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত
এখন জানব জ্বর হলে কোণ ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। নিচে জ্বরের সময় কোন ধরনের খাবার খেলে শরীর ভালো থাকে তা উল্লেখ করা হলো –
ফলের রস- ঘরে তৈরি বিভিন্ন ফল দ্বারা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন সি যুক্ত তাজা ফলের রস যেমন কমলা মাল্টা জাম্বুরা সবুজ আপেলের জুস আনারসের রস ইত্যাদি জ্বরের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
মিল্কশেক- মিল্কশেক খুবই ক্যালোরিবহুল একটি পানীয়। যদি তার সঙ্গে ওটস বা কিসমিস খেজুর বাদাম কলা পিনাট বাটার ইত্যাদিযোগ করা হয় তবে জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া লক্ষণ থাকে। তবে মিল শেক না দেওয়াই ভালো।
চা- জ্বরের সময় আদা চা বা মসলাযুক্ত চা বা যে কোন হারবাল চা খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। কারণ এগুলোতে আছে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা। চায়ের সঙ্গে লেবু মধু তুলসী পাতা পুদিনা পাতা বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে সর্দি কাশি এবং জ্বর কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
চিকেন সুপ- প্রটিন এবং ক্যালোরি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে চিকেন সুপের কোন বিকল্প নেই। জ্বর এক সময় অনেক সময় বমি ডায়রিয়ার মত লক্ষণ থাকে সেক্ষেত্রে স্যুপ ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স করতে অনেক সাহায্য করে। স্যুপের সঙ্গে সবজি ও মেশাতে পারেন এছাড়াও কোন সুপ এক স্যুপ বা থাই সুপও করে দিতে পারেন।
ডাবের পানি- জ্বরের সময় দেহে পানি শূন্যতা তৈরি হয়। যার ফলে শরীর ডিহাইড্রেশন মুক্ত করার জন্য ডাবের পানি পান করতে পারেন। তাদের পানিতে বিভিন্ন ধরনের পানীয় এবং উপাদান থাকার ফলে এ সময় ডাবের পানি খেতে ভালো লাগে।
জাউ ভাত- জ্বরের সময় যাও ভাত খুব বেশি উপকারী একটি খাবার। এটি সহজ পাচ্য এবং সহজেই খাওয়া যায়। এ সময় যদিও কোন কিছু খেতে ভালো লাগে না কিন্তু জাও ভাতের সঙ্গে পাতলা পেঁপে মুরগির ঝোল দিলে খুবই ভালো লাগে খেতে এবং মুখে রুচিও বৃদ্ধি পায়।
ডিম সেদ্ধ- ডিম জ্বরের সময় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। দুধ পনির মাশরুম দিয়ে ডিম ভাজি ওই সময় বেশ মুখরোচক লাগে। এছাড়া ডিমের পুডিং বা ডিমের যে কোনো রেসিপিও করে দেওয়া যেতে পারে।
জ্বরে আনারসের উপকারিতা
আজকে আমরা জ্বরে আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- জ্বর, ঠান্ডা, সর্দির ট্যাবলেট এর নাম
- বাচ্চাদের জ্বরের সাপোজিটরি নাম ও ব্যবহারের নিয়ম
- ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা