জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত বিবাহ জীবনের পরবর্তী সময়ে কিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ সচেতন ভাবে করা যায় সে সম্পর্কে অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগেন। অনেকে বিয়ের পরবর্তী সময়ে পরিবার বাড়াতে চান না তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম কি বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চান।
আজকে আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
- আরো পড়ুনঃ নবজাতকের টিকার তালিকা ও কখন দিতে হয়?
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল হলো গর্ভনিরোধনের জন্য প্রযোজ্য একটি বড়ি বা ঔষধ। যা গর্ভনিরোধক বরি বা ও সিপিএস নামেও পরিচিত। যার মধ্যে প্রয়োজনীয় হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরন অথবা দুটো নির্দিষ্ট মাত্রায় সমন্বিত থাকে। এটি সাধারণত সন্তান না হবার জন্য সেবন করা হয়ে থাকে।
প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম কি সে সম্পর্কে আমরা নিচে আলোচনা করব। তবে তার আগে প্রচলিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো কি কি সে সম্পর্কে আমরা জেনে নিব। নিচে প্রচলিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হলো-
ব্যারিয়ার মেথড- ব্যারিয়ার মেথড পুরুষ এবং মহিলা কনডম, স্পার্মিসাইড ডায়াফ্রাম, সারভাইকাল ক্যাপ স্পঞ্জ এসবের মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি- মিশ্র বড়ি প্রজেস্টেরন বরি বা মিনিটিল মিশ্র বড়ি সাধারণত সুখী নামে পাওয়া যায়। আর সরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রজেক্টর অনুভূতি আপন নামে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ঔষধ পাওয়া যায়।
জরায়ুতে পড়ার ইন্ট্রা- ইউটেরাইন ডিভাইস হরমোনের তৈরি বা কপারের তৈরি ইমপ্ল্যান্ট যা জরায়ুতে স্থাপন করলে সন্তান গর্ভে ধারণ হয় না।
ইনজেকশন- জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন পাওয়া যায় যেমন ডিপো, প্রভেরা।
জন্ম স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি- পুরুষদের জন্য ভিজিট টমি নারীদের টিউবার লাইগেশন
প্রাকৃতিক পদ্ধতি- ল্যাকটেশনাল এমএনওরিয়া উপরে সবগুলো পদ্ধতি ডেলিভারি পরে ও ব্যবহার করা যায়। প্রত্যেকটি পদ্ধতির আলাদা আলাদা কার্যকারিতা এবং ব্যবহারবিধি রয়েছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য
জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি বাছাইয়ের আগে যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো সন্তান। অর্থাৎ আপনি কয়টি সন্তান চান চাইলে কতদিন পর চান আর যদি সন্তান না চান সে ক্ষেত্রে স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কি কি রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বাছাই করতে পারেন।
সময়- কিছু পদ্ধতির সন্তান প্রসবের পর পরই শুরু করতে হয়, কিছু পদ্ধতি আগে শুরু করতে আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয় কাজে পছন্দের সময় অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
বুকের দুধ খাওয়ানো- যদি বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করিয়ে থাকেন তাহলে সব ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। কোন কোন পদ্ধতি আপনার বুকের দুধের উপর প্রভাব ফেলতে পারে তা একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন।
কার্যকারিতা- গর্ভাবস্থার আগে ব্যবহার করেছেন এমন অনেক পদ্ধতি গর্ভাবস্থার পরে কার্যকর নাও হতে পারে। তাই স্পঞ্জ পদ্ধতি জরায়ুর মুখের ক্যাপ পদ্ধতি ইত্যাদি আপনি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবহার করতে পারেন।
পুনরাবৃত্তি- একটি পদ্ধতি আপনি কতদিন ব্যবহার করতে চান বা সেটি কতদিন পর্যন্ত কাজ করবে সেটি জানাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কিছু পদ্ধতি আপনাকে প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে আবার কিছু পদ্ধতি একবার ব্যবহারেই আপনাকে এক মাস কিংবা এক বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে।
যৌনবাহিত রোগ- আপনার অথবা আপনার সংগীর জনবাহিত রোগ থাকলে সেটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আছে। এর ক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন নানা ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে এ রোগ ছড়াতে পারেনা সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশের প্রায় সকল জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম একই। প্রতি প্যাকেটে ২১ টি সাদা গর্ভনিরোধক বড়ি এবং সাতটি খয়রি রঙের আয়রন বড়ি থাকে। কোন কোন প্যাকেটে বা পাতায় শুধুমাত্র ২১ টি জন্মনিরোধক বড়ি থাকে। প্রথমবার এই পিল খাওয়ার শুরু করার সময় হলো পিরিয়ডের প্রথম দিন অর্থাৎ মাসিকের প্রথম দিন হতে সাদা বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে।
তবে পিরিয়ড শুরুর প্রথম দিন হতে পঞ্চম দিন পর্যন্ত যে কোন দিন থেকেই শুরু করা যাবে। যে মহিলা গর্ভপাত বা এম আর করেছেন বা যে মহিলাদের গর্ভপাত হয়েছে তারা যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে পিল পছন্দ করেন তবে গর্ভপাত করার দিন থেকেই বা পরবর্তী পঞ্চম দিনের মধ্যে এই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া শুরু করতে পারেন।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রথম পিল দিয়ে শুরু করতে হবে। পরের পাতার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অনুসরণ করে প্রথম ঔষধ হতে ২১ দিনে ২১ টি সাদা ওষধ খেতে হবে। সাদা ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর একই ভাবে একটি করে সাত দিনে সাতটি খয়েরী কালারের ঔষধ খেতে হবে।
খয়েরী কালার খাওয়ার সাথে সাথে সাধারণত পিরিয়ড শুরু হয়। তখন ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। পিরিয়ড হোক বা না হোক সার্বিক খয়রি কালারের পিল শেষ করতে হবে এবং একে নিয়ম অনুযায়ী একটি পাতা থেকে সাদা ওষধ খাওয়া শুরু করতে হবে। যেকোনো ধরনের ঔষধ পানি দিয়ে গিলে ফেলতে হয়।
প্রতিদিন একই সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে রাতের খাবারের পরে বা সোয়ার আগে। যেসব প্যাকেটে ২১টি করে ওষধ থাকে সে ২১ টি ঔষধ শেষ হয়ে গেলে পিরিয়ডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পিরিয়ড শুরু হলে পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে আবার নতুন প্যাকেটের ঔষধ খাওয়া শুরু করতে হবে।
ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
ইমারজেন্সি পিল সাধারণত কোন ক্ষেত্রে যদি কোন ভাবে সন্তান ধারণের ঝুঁকি থাকে এবং লম্বা সময় সন্তান গর্ভধারণ করতে না চান তখন সেবন করতে হয়। ইমারজেন্সি পিলকে অনেক সময় মর্নিং পিল বলা হয় । শারীরিক সম্পর্কের ১২০ ঘন্টা বা ৫ দিনের মধ্যেই ইমারজেন্সি পিল সেবন করা যায়।
তবে এই ইমারজেন্সি পিল ৭২ ঘন্টা বা তিন দিনের মধ্যে খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। ইমার্জেন্সি পিল সাধারণত তিন পাঁচ এবং ২১ দিনের হয়। তবে ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার আগে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ের নির্দেশনা বলি পড়ে নিতে হবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল মিস হলে করণীয়
অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করেন কিন্তু সঠিক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খেতে ভুলে গেলে বা মিস করলে কি করতে হবে তা অনেকেই জানেন না। যদি প্রথম একদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল মিস হয় তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যখনই মনে পড়বে তখনই খেতে পারবেন।
তবে সেই দিনের ডোজ টা নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। এটা হচ্ছে একটি পীল মিস হলে করণীয়। আর যদি পিরিয়ডের প্রথম সাত দিনের মধ্যে একটি পিল মিস হয় তাহলে যেকোনো সময় খেতে পারেন অথবা নির্দিষ্ট সময় খাওয়া যাবে। কারো যদি দুইটি পিল বাদ পড়ে এবং সেটা পিরিয়ডের সপ্তম থেকে ১৪ দিন অথবা ২১ দিনে হয় তাহলে সেই পিল যখন মনে হবে তখন খাবে না হলে পরবর্তী দ্বিতীয় দিনে দুইটা পিল একসঙ্গে খেতে হবে।
তারপরও সাত দিন অথবা ১৪ দিন পর্যন্ত সে অন্য কোন বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে সঙ্গীর সাথে মিলিত হতে হবে। এটা না হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। কারো যদি পিল ২১ দিনের পরবর্তী এবং ২৮ দিনে কাছাকাছি সময় অথবা সাত দিন পিল মিস হয়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে পাতাটি ফেলে দিয়ে ওয়েট করতে হবে যে তার পিরিয়ড হয় কিনা।
যদি পিরিয়ড হয় তখন সে আবার নতুন পাতা শুরু করতে পারবে।
কাদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল প্রযোজ্য নয়
বিভিন্ন বয়সের মহলাদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ক্ষতিকর। যেমন-
- ৪০ বছরের বেশি বয়স মহিলাদের জন্য
- পিল খেলে হৃদরোগ এর সম্ভাবনা থাকে
- সদ্য মা হোয়া মহিলাদের ইস্ট্রোজেন এ মাত্রা বেশি এমন সময় পিল খাওয়া উচিত না
- এতে করে বুকের দুধ কমে যেতে পারে
- যেসব মহিলাদের মাইকেলের সমস্যা আছে তাদের জন্য পিল খাওয়া ক্ষতিকর
- যেসব মহিলার রক্তে কোলেস্টরে পরিমাণ বেশি
- যাদের ডায়াবেটিস আছে এমন মহিলা
- স্ট্রোকের ঝুকি রয়েছে এমন মহিলা
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার সুবিধা
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন-
- যেকোনো ধরনের বয়সের মহিলারা জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি হিসেবে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন
- এটি একটি অস্থায়ী পদ্ধতি যেকোনো সময় এর পরে ছেড়ে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়
- এবং গর্ভধারণ করতে কোন সমস্যা হয় না
- সঠিকভাবে পিল খেলে অত্যন্ত কার্যকরী হয়
- মাসিক চক্র নিয়মিত থাকে
- সন্তান ধারণের ঝুকি কম থাকে
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার অসুবিধা
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার সুবিধাড় পাশাপাশি অসুবিধা ও রয়েছে। যেমন-
- প্রতিদিন খেতে হয়
- মিস হলে সমস্যা হতে পারে
- মাসিক বন্ধ হয়ে থাকতে পারে
- যৌনিপথের পিচ্ছিলতা কমে যেতে পারে
- বুকের দুধ কমে যেতে পারে
- বমি দেখা দিতে পারে
- বমির ভাব হতে পারে
- মাথা ব্যথা
- মুখে ব্রণ
- ওজন বৃদ্ধি
- থাইরয়েডের সমস্যা
- গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- জরায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে সতর্কতা
অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করার পর বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। যেমন এক বা উভয় পা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে ব্যথা হওয়া, পেটে ব্যথা হওয়া, জ্বর হওয়া, বমি হওয়া, গায়ে স্পর্শ করার সাথে সাথে ব্যথা হওয়া, রক্ত পড়া, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হওয়া, সহবাসের সময় ব্যথা হওয়া, দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যথা হওয়া, দীর্ঘস্থায় বমি হওয়া, দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তপাত হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম
আজকে আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি বিস্তারিত – ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল
- পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে, Pregnancy test
- গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম [১০০% কার্যকরী]