চুলকানির মলম
চর্ম রোগ সাধারণত আমাদের কমবেশি সবারই হয়ে থাকে। বিভিন্ন খোঁজ পাচড়া চুলকানি সহ বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের সাথে আমরা পরিচিত। তবে যেকোনো স্কিনের রোগের কারনে প্রচুর পরিমাণে চুলকায় বলে অসহ্যকর অনুভূতি হয়। চুলকানি হলে অনেকেই এলার্জিজনিত চুলকানি মলম ও ক্রিমের নাম সম্পর্কে জানতে চান।
আজকে আমরা এলার্জি জনিত চুলকানির মলম এবং ক্রিমের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
চুলকানি কি?
চুলকানি এমন একটি অনুভূতি যে জায়গায় চর্মরোগ হয় সেখানে নখ দিয়ে খামছাতে ইচ্ছে করে। চুলকানি হতে পারে এলার্জি কারণে বা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাথে সম্প্রীতিক সমস্যা হলে অথবা কোন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা দেহের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্য কোন অন্তনিহিত কারনে।
সাধারণত চুলকানি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সেগুলো খুব সহজে চেনা যায় এগুলো দেখতে ফুসকুড়ি মত লাল হয়। চুলকানি সাধারনত ছত্রাকের সংক্রমণেই হয়। তবে অনেক সময় বিভিন্ন অসুখের উপসর্গ হিসেবেও চুলকানি দেখা দিতে পারে। যেমন- কিডনি এবং লিভারের সমস্যা।
চিকিৎসা শাস্ত্রে চুলকানি কে প্রোরিতাস বলা হয়। এর মানে হলো অস্বস্তিকর অনুভূ।তি চুলকানি সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ত্বক শুষ্ক থাকা। এলার্জি, হাঁপানি যাতে রয়েছে তাদের চুলকানি বেশি হয়।
চুলকানি হওয়ার কারণ
এলার্জি জনিত চুলকানি হওয়ার মূল কারনগুলো জেনে নিবো। যেমন-
- বিভন্ন খাবারে এলার্জি থাকলে
- বিভিন্ন বাহ্যিক বস্তু ত্বকের সংস্পর্শে আসলে যেমন এসিড কাপড় কাচার সাবান ইত্যাদি
- বিভিন্ন প্রকার ওষুধ যেমন পেনিসিলিন স্টেপটোমাই সিম সালনামেড ইত্যাদি ঔষধ এলোমেলো মাত্রা সেবন করার কারণে এক্সিমা হয়
- অ্যান্টিবডি ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে শরীরে এন্টিজানের মাত্রা বেড়ে গেলে চুলকানি হতে পারে
- বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করার ফলে যেমন চুলের রং লিপিস্টিক নেলপালিশ ইত্যাদি ত্বক অপরিষ্কার থাকলে
- ত্বক বেশি শুষ্ক থাকলে
- ত্বকের যত্ন না নিলে
- নিয়মিত স্কিনে ময়শ্চারাজার ব্যবহার না করলে
- রক্তশূন্যতায় এবং পানির অভাবজনিত কারণে চুলকানি হতে পারে
- ডায়াবেটিস হরমোন এবং থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণেও চুলকানি দেখা দেয়
- রক্তে ক্যান্সার থাকলে চুলকানি হতে পারে
- এলার্জি থাকলে
- সেন্সিটিভ স্কিন হলে
চুলকানির লক্ষণ
এলার্জি জনিত চুলকানি তথা একজিমার লক্ষন ভালোভাবে জানতে হবে। কারন লক্ষন ভালোভাবে না জানলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।
- প্রদাহ
- লাল হয়ে যাওয়া
- ফুলে যাওয়া
- স্কিন শুষ্ক হওয়া
- খসখসে হওয়া
- প্রথমে আক্রান্ত স্থান লালবর্ণের হয়
- পরবর্তীতে গোটা পেপুল বা বেশি কলের উৎপত্তি হয়
- আক্রান্তের স্থানে প্রচন্ড জ্বালা যন্ত্রণা ও চুলকানি বিরাজ করে
- চুলকানোর পর গোটা গোল এক ধরনের তরল পানি বের হয়
- ক্ষতস্থানে ইনফেকশনের কারণে আক্রান্ত স্থানে গোটা সৃষ্টি হয়
- এক্সিমা পুরাতন হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়
- এবং আক্রান্ত ত্বক বেশ কালশে বর্ণ ধারণ করে
চুলকানির মলমের নাম
শরীরে চুলকানি হলে ঔষধের চেয়ে সাধারনত মলম ভালো কাজ করে থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুলকানির মলম পাওয়া যায়। এই পর্যায়ে আমরা চুলকানি মলম এর নাম জানার চেষ্টা করবো।
- Fungin
- fungin B
- funggidal HC
- Pevison
- Antifungal Cream
- Pevison
- calceria salt
- নেট্রাম সল্ভ
চুলকানির ঔষধের নাম
সাধারণত শরীরে এলার্জি বা বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণের ফলে শরীরে চুলকানি রোগ দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের স্কিনে ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই স্কিনের যে কোন রোগ হলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেকোনো ওষুধ সেবনে পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
এলার্জি জনিত চুলকানি মলম বাজারে পাওয়া যায়। শরীরে চুলকানির জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো-
okacet 10 mg Tablet- ওকেসেট হল একটি অ্যান্টিক সিস্টেম বা এলার্জিজনিত রোগের ট্যাবলেট। এসব লক্ষণ যেমন চুলকানি হাচি নাক দিয়ে স্রোত এবং চোখ থেকে জল পড়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আম্বাতের দ্বারা ফোলা ভাব এবং চুলকানি চিকিৎসা জন্য ওষুধটি খুবই কার্যকরী হিসেবে পরিচিত। এর রাসায়নিক ক্রিয়া এন্ডডিসটামিন আপনার শরীরের রাসায়নিক কে রাস করে এবং ব্লক করে।
এই ট্যাবলেট এলার্জির ওষুধ, সর্দি, নাক জলযুক্ত চোখ এবং চুলকানি নাক বা গলাতে হালকা এলার্জি লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
আরো কিছু চুলকানির ট্যাবলেট এর নাম হল –
- এলাট্রল
- ওরা ডিন
- Atarax 25mg
- ses no
- Diphenhydramine
- Cetrizine
- Loratadine
- Desloratadin
- fexofenadine
- Rupadin 10
- Drama 50
চুলকানির ওষুধের ডোজ
চুলকানির ট্যাবলেট গ্রহণ করার সময় ওষুধের কাগজে প্রদত্ত নির্দেশনাবলি অনুযায়ী সেবন করতে হবে। এছাড়াও আপনার ডাক্তারের দেয়া নির্দেশনা বোধক অনুসরণ করে সেবন করবেন। কেননা প্রয়োজনে পরিমাণ এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে বা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি চিবিয়ে খাওয়ার ট্যাবলেটটি নিয়ে থাকেন তবে গিলে খাওয়ার আগে অবশ্যই এটি সঠিকভাবে চিবিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও যদি ও এক বেলা মিস হয়ে যায় তাহলে একসাথে দুটি ডোজ গ্রহন করবেন না। অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধটি গ্রহণ করলে অস্থিরতা ঘাবড়ে যাওয়া এবং তন্দ্রার মতো অনুভূতি দেখা যেতে পারে।
এলার্জিজনিত চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম
চুলকানি রোগ বিভিন্ন কারনে হতে পারে। তবে এলার্জির কারনে চুল্কানি বেশি হয়। এলার্জি জনিত চুলকানির মলম ও ক্রিমের নাম হল-
- Diphenhydramine
- Cetrizine
- Loratadine
- Desloratadine
- fexofenadine
চুলকানি ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া- যদিও এলার্জি জনিত চুলকানির ক্রিম বা ওষুধ গ্রহণ করার সময় তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে ওসব থেকে পেটে ব্যথা বমি বমি ভাব ডায়রিয়ার শুকনো ক্লান্তি এবং তন্দ্রা জাতীয় কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সাধারণত এটি খুব একটা সময় হয় না তবে যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
তাছাড়াও প্রস্রাবের সমস্যা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া অনেক স্পন্দন ইত্যাদি সমস্যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর লক্ষণ। তাই এসব সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিন এবং ঔষধ গ্রহণ করা বন্ধ করুন।
চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
এলার্জি জনিত চুলকানির ক্রিমের নাম জানার পাশাপাশি চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় জানা দরকার। নিচে চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হল-
নিমপাতা- নিমপাতা পিষে শরীরে যেসব স্থানে চুলকানি হয় সেসব স্থানে লাগাতে পারেন। আবার নিমপাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সে পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন এটা অনেকটাই উপকার পাওয়া যাবে।
লেবুর রস- আপনার ত্বকের যে স্থানে চুলকানি হয়েছে সে স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করলে চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
নারিকেল তেল- যে কোন প্রকার চুলকানি, জ্বলা পোকার কামড় বা অন্য কোন কারণে চুলকানি হলে যেখানে চুলকাবে সেখানে নারিকেল তেল মাসাজ করতে পারেন। যদি সম্পূর্ণ শরীরে চুলকানি হয় তবে হালকা করে পুরো শরীরের তেল মাখতে পারেন এতে করে খুব সহজেই চুলকানি কমে যাবে।
অ্যালোভেরা– এলোভেরা প্রাকৃতিক গুণাবলীতে ভরা। চুলকানি প্রতিরোধ করতে এলোভেরা অনেক কার্যকরী। অ্যালোভেরার পাতা থেকে রস বের করে চুলকানির স্থানে আলতো করে লাগান দ্রুত চুলকানি কমাতে সহায়তা করবে।
বেকিং সোডা- চুলকানি দূর করতে বেকিং সোডা খুবই উপকারী একটি ঘরোয়া উপাদান। গোসলের সময় পানির সাথে হালকা বেকিং সোডা মিশিয়ে গোসল করলে শরীরের চুলকানির ভাব অনেকটাই কমে যায়। যারা বাতটাবে গোসল করেন তাদের জন্য একটি চৌবাচ্চা এর জন্য এক কাপ বেকিং সোডা অথবা এক বালতি পানির জন্য হাফ কাপ বেকিং সোডা ব্যবহার করতে হবে।
সে পানিতে শরীর ভিজিয়ে ৩০ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে।
তুলসী পাতা- শরীরের চুলকানো রোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দূর করতে তুলসী পাতা অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতা রয়েছে চুলকানি দূর করার বিশেষ উপাদান। একমগ পানিতে ১৫ থেকে ২০ টি তুলসীপাতা দিয়ে জাল করে তুলসী পাতার নির্যাস বের করে নিতে হবে।
এরপর সে পানি হালকা গরম থাকতে একটি তোয়ালেতে ভিজিয়ে চুলকানোর জায়গায় দিলে সহজে আরাম মিলবে এবং চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
নারিকেল তেল- নারিকেল তেল চুলকানি সহ স্কিনের বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। এলার্জি জনিত চুলকানির ক্রিমের নাম জানলেও এসব ব্যবহার করা উচিত।
চুলকানি দূর করার খাবার
শরীরে বিভিন্ন ধরনের চুলকানি দেখা দিলেও চুলকানি দূর করার খাবার রয়েছে। যাদের অ্যালার্জি জনিত কারণে চুলকানি হয় তারা এলার্জিযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো। নিচে চুলকানি দূর করার খাবারের তালিকা দেয়া হলো-
- করোলা ভাজি
- নিম পাতার রস
- দই
- বায়োফ্লেভানোয়েড সমৃদ্ধ খাবার যেমন আপেল পেঁয়াজ চা
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার
- ক্যাস্টর অয়েল
- লেবু
- ভিটামিন সি
- শসা এবং গাজর
- আদাযুক্ত চা
চুলকানির প্রতিরোধে করণীয়
যেখানে রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরক্ষা করাই উত্তম। এলার্জি বা যেকোনো কারণে চুলকানি হবার আগে এসব না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। নিচে চুলকানির প্রতিরোধে করনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হল-
- শরীরে চুলকানি হলে আক্রান্ত স্থান সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- এলার্জি হয় এমন জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে
- তৈলাক্ত ভাজা পোড়া অথবা এলার্জিজনিত জিনিস খাওয়া যাবেনা
- প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ফলমূল রাখতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে
- ব্যবহার্য জিনিস জামা কাপড় সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- ঘরবাড়ি ধুলোবালি মুক্ত রাখতে হবে
- নখ লাগানো যাবে না
- সাবান বা কোন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যাবে না
- প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করতে হবে
- চুলকানি হলে অন্য কারো পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করা যাবে না
- অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রহণ করুন
এলার্জি জনিত চুলকানির মলম
আজকে আমরা এলার্জি জনিত চুলকানির মলম এবং ঔষধের নাম সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি এলার্জিজনিত চুলকানি মলম সম্পর্কে আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম অর্থ কি?
- চোখের এলার্জির ড্রপের নাম, চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
- শরীরের পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম নাম