চুলকানির ঔষধের নাম
শীত কিংবা গরম শরীরে বিভিন্ন সমস্যার ফলে স্কিনে চুলকানি হতে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান সময়ে এই আবহাওয়া শরীরের চুলকানি খুব বেশি দেখা যায়। চুলকানি সাধারণত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সেটা সব বিভিন্ন সংক্রমণ বা এলার্জির কারণে দেখা দিতে পারে স্কিনের বিভিন্ন রোগের মধ্যে চুলকানি অন্যতম।
আজকে আমরা চুলকানি কেন হয় চুলকানির ঔষধের নাম এবং চুলকানি বিভিন্ন ক্রিম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – চোখের এলার্জির ড্রপের নাম, চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
একজিমা কি?
স্কিনে যেসব চুলকানি হয়ে থাকে সেটাকে অ্যাক্সিমা বলা হয়। এক্সিমা হল চামড়া এলার্জি জাতীয় প্রদাহ। এতে চামড়ার উপর চুলকানি ফোলা ভাব, পানি বা রস নিঃসরণ হয়, চামড়া শুষ্ক ও কালো হয়ে যায়। সুতরাং শরীরের চুলকানি হলে একজিমা হওয়ার প্রবণতায় বেশি হয়।
আরো পড়ুন – ডাস্ট এলার্জি কেন হয় ও ডাস্ট এলার্জি চিকিৎসা বিস্তারিত
একজিমার লক্ষণ
চুলকানির ঔষধের নাম জানার পূর্বে চুলকানি তথা একজিমার লক্ষন ভালোভাবে জানতে হবে। কারন লক্ষন ভালোভাবে না জানলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।
- প্রথমে আক্রান্ত স্থান লালবর্ণের হয়
- পরবর্তীতে গোটা পেপুল বা বেশি কলের উৎপত্তি হয়
- আক্রান্তের স্থানে প্রচন্ড জ্বালা যন্ত্রণা ও চুলকানি বিরাজ করে
- চুলকানোর পর গোটা গোল এক ধরনের তরল পানি বের হয়
- ক্ষতস্থানে ইনফেকশনের কারণে আক্রান্ত স্থানে গোটা সৃষ্টি হয়
- এক্সিমা পুরাতন হয়ে গেলে ব্যথা কমে যায়
- এবং আক্রান্ত ত্বক বেশ কালশে বর্ণ ধারণ করে
চুলকানি হবার কারণ
চুলকানির ঔষধের নাম জানার পূর্বে এই পর্যায়ে আমরা চুলকানি হওয়ার মূল কারনগুলো জেনে নিবো।
- বিভিন্ন বাহ্যিক বস্তুর ত্বকের সংস্পর্শে আসলে যেমন এসিড কাপড় কাচার সাবান ইত্যাদি
- বিভিন্ন প্রকার ওষুধ যেমন পেনিসিলিন স্টেপটোমাই সিম সালনামেড ইত্যাদি ঔষধ এলোমেলো মাত্রা সেবন করার কারণে এক্সিমা হয়
- অ্যান্টিবডি ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে শরীরে এন্টিজানের মাত্রা বেড়ে গেলে চুলকানি হতে পারে
- বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করার ফলে যেমন চুলের রং লিপিস্টিক নেলপালিশ ইত্যাদি ত্বক অপরিষ্কার থাকলে
- ত্বক বেশি শুষ্ক থাকলে
- ত্বকের যত্ন না নিলে
- নিয়মিত স্কিনে ময়শ্চারাজার ব্যবহার না করলে
- রক্তশূন্যতায় এবং পানির অভাবজনিত কারণে চুলকানি হতে পারে
- ডায়াবেটিস হরমোন এবং থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণেও চুলকানি দেখা দেয়
- রক্তে ক্যান্সার থাকলে চুলকানি হতে পারে
শরীরে চুলকানির ঔষধের নাম
সাধারণত শরীরে এলার্জি বা বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণের ফলে শরীরে চুলকানি রোগ দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের স্কিনের ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই সিকের যে কোন রোগ হলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেকোনো ওষুধ সেবনে পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
তবে বাজারে শরীরে চুলকানির বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অন্যতম হলো-
okacet 10 mg Tablet- ওকেসেট হল একটি অ্যান্টিক সিস্টেম বা এলার্জিজনিত রোগের ট্যাবলেট। এসব লক্ষণ যেমন চুলকানি হাচি নাক দিয়ে স্রোত এবং চোখ থেকে জল পড়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আম্বাতের দ্বারা ফোলা ভাব এবং চুলকানি চিকিৎসা জন্য ওষুধটি খুবই কার্যকরী হিসেবে পরিচিত। এর রাসায়নিক ক্রিয়া এন্ডডিসটামিন আপনার শরীরের রাসায়নিক কে রাস করে এবং ব্লক করে।
এই ট্যাবলেট এলার্জির ওষুধ, সর্দি, নাক জলযুক্ত চোখ এবং চুলকানি নাক বা গলাতে হালকা এলার্জি লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
ওষুধের ডোজ- এই ট্যাবলেট গ্রহণ করার সময় ওষুধের কাগজে প্রদত্ত নির্দেশনাবলি অনুযায়ী সেবন করতে হবে। এছাড়াও আপনার ডাক্তারের দেয়া নির্দেশনা বোধক অনুসরণ করে সেবন করবেন। কেননা প্রয়োজনে পরিমাণ এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে বা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি চিবিয়ে খাওয়ার ট্যাবলেটটি নিয়ে থাকেন তবে গিলে খাওয়ার আগে অবশ্যই এটি সঠিকভাবে চিবিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও যদি ও এক বেলা মিস হয়ে যায় তাহলে একসাথে দুটি ডোজ গ্রহন করবেন না। অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধটি গ্রহণ করলে অস্থিরতা ঘাবড়ে যাওয়া এবং তন্দ্রার মতো অনুভূতি দেখা যেতে পারে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া- যদিও এ ওষুধ গ্রহণ করার সময় তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। তবে ওসব থেকে পেটে ব্যথা বমি বমি ভাব ডায়রিয়ার শুকনো ক্লান্তি এবং তন্দ্রা জাতীয় কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সাধারণত এটি খুব একটা সময় হয় না তবে যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
তাছাড়াও প্রস্রাবের সমস্যা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া অনেক স্পন্দন ইত্যাদি সমস্যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর লক্ষণ। তাই এসব সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সহায়তা নিন এবং ঔষধ গ্রহণ করা বন্ধ করুন।
আরো পড়ুন – নাকের এলার্জি দূর করার উপায়, ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ নাম
আরো কিছু চুলকানির ট্যাবলেট এর নাম হল –
- এলাট্রল
- ওরা ডিন
- Atarax 25mg
- ses no
- Diphenhydramine
- Cetrizine
- Loratadine
- Desloratadin
- fexofenadine
- Rupadin 10
- Drama 50
চুলকানির মলমের নাম
শরীরে চুলকানি হলে ঔষধের চেয়ে সাধারনত মলম ভালো কাজ করে থাকে। এই পর্যায়ে আমরা চুলকানির ঔষধের নাম এর পাশাপাশি কিছু মলমের নাম জানার চেষ্টা করবো।
- Fungin
- fungin B
- funggidal HC
- Pevison
- Antifungal Cream
- Pevison
- calceria salt
- নেট্রাম সল্ভ
এলার্জিজনিত চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম
- Diphenhydramine
- Cetrizine
- Loratadine
- Desloratadine
- fexofenadine
চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
নিমপাতা- নিমপাতা পিষে শরীরে যেসব স্থানে চুলকানি হয় সেসব স্থানে লাগাতে পারেন। আবার নিমপাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সে পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন এটা অনেকটাই উপকার পাওয়া যাবে।
লেবুর রস- আপনার ত্বকের যে স্থানে চুলকানি হয়েছে সে স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করলে চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
নারিকেল তেল- যে কোন প্রকার চুলকানি, জ্বলা পোকার কামড় বা অন্য কোন কারণে চুলকানি হলে যেখানে চুলকাবে সেখানে নারিকেল তেল মাসাজ করতে পারেন। যদি সম্পূর্ণ শরীরে চুলকানি হয় তবে হালকা করে পুরো শরীরের তেল মাখতে পারেন এতে করে খুব সহজেই চুলকানি কমে যাবে।
অ্যালোভেরা– এলোভেরা প্রাকৃতিক গুণাবলীতে ভরা। চুলকানি প্রতিরোধ করতে এলোভেরা অনেক কার্যকরী। অ্যালোভেরার পাতা থেকে রস বের করে চুলকানির স্থানে আলতো করে লাগান দ্রুত চুলকানি কমাতে সহায়তা করবে।
বিভিন্ন চর্মরোগ দূর করার সহজ উপায়
কমবেশি বিভিন্ন চর্মরোগে সবাই ভোগেন। গরমকালে এ জাতীয় রোগ বেশি দেখা যায়। তাছাড়া অপরিস্কার এবং ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে খুব বেশি চুলকানি হয়ে থাকে। তবে কিছু নিয়ম মেনে চলার জন্য রোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে স্কিনের রোগ দূর করার উপায় গুলো বর্ণনা করা হলো-
ঘামাচি- গরমের সময় ঘামাচি একটি অন্যতম সমস্যা। ঘামাচি তখনই হয় যখন ঘামের কারণে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। তখন ঘামের নিচে ত্বকের নিচে ঘামাতে দেখা যায়। সাধারণত ঘামাচি সারানোর জন্য পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
ব্রণ- সাধারণত বয়সন্ধিকালে ব্রণ দেখা দেয় এটিকে টিনেজারদের রোগ ও বলা যেতে পারে। ১৮ থেকে ২০ বছরে ছেলেমেয়েদের এই ব্রন হতে বেশি দেখা যায়। ব্রন থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত ঝাল ভাজাপোড়া খাবার সহ চকলেট আইসক্রিম বাইরের খাবার কমিয়ে খেতে হবে। এছাড়া বেশি বেশি পানি এবং শাকসবজি খেতে হবে ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে।
দাদ- শরীরের যে কোন স্থানে ফাঙ্গাস দারা আক্রান্ত হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কে দাদ বলা হয়। এ আক্রমণ মাথার চামড়ায় হাত পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে। দাদ একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই আক্রান্ত স্থান থাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের তাদের মলম পাওয়া যায় সেসব ব্যবহারের ফলে তা দূর হয়ে যায়।
এছাড়াও দাদ থেকে দূরে থাকতে অন্যের ব্যবহার যে জিনিসপত্র ব্যবহার না করা উচিত।
খোঁজ পাচড়া- শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। যারা পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার এবং নিয়মিত গোসল করে না তাদের এই খোঁজ পাচড়া রোগ বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত শিশুরা ময়লায় থাকতে বেশি পছন্দ করে এবং সে জন্য মায়েদের উচিত খোজ পাঁচড়া থেকে শিশুদের মুক্তি দিতে সব সময় পরিষ্কার রাখা এবং পরিষ্কার জামা কাপড় পরানো।
এক্সিমা- এক্সিমা হল ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকের প্রদানের সৃষ্টি করে। একেক ধরনের ম্যাক্সিমার লক্ষণ এক এক রকম। তবে সাধারণত লালচে যুক্ত চুলকানি হওয়া হাতে পায়ে ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট ফুসকুড়ি হওয়া একেই এক্সিমার লক্ষণ বলে। ডিটারজেন্ট সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে সংক্রমণ হতে পারে। অতিরিক্ত গরম অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া একজিমার কারণ তাই যে কোন আবহাওয়ায় নিজের ত্বককে সুস্থ রাখতে হবে।
আর্সেনিক- সাধারণত আর্সেনিক একটি চর্ম রোগ। আর্সেনিকযুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা স্কইন কালো হয়ে যাওয়া শক্ত হয়ে খসখসে হওয়া । স্কিনে বিভিন্ন স্থান সাদাকালো দাগ অথবা হাত পায়ের তালুর চামড়া শক্ত বা ফেটে যাওয়া। আর্সেনিক রোগের শেষ পরিণতি হলো কিডনি বা লিবারে কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া।
এছাড়াও ত্বক ফুসফুস এবং মূত্রথলে ক্যান্সার হওয়া। তাই সবসময় নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
চুলকানি দূর করার খাবার
- করোলা ভাজি
- নিম পাতার রস
- দই
- বায়োফ্লেভানোয়েড সমৃদ্ধ খাবার যেমন আপেল পেঁয়াজ চা
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার
- ক্যাস্টর অয়েল
- লেবু
- ভিটামিন সি
- শসা এবং গাজর
- আদাযুক্ত চা
চুলকানির প্রতিরোধে করণীয়
- শরীরে চুলকানি হলে আক্রান্ত স্থান সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- এলার্জি হয় এমন জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে
- তৈলাক্ত ভাজা পোড়া অথবা এলার্জিজনিত জিনিস খাওয়া যাবেনা
- প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ফলমূল রাখতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে
- ব্যবহার্য জিনিস জামা কাপড় সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
- ঘরবাড়ি ধুলোবালি মুক্ত রাখতে হবে
- নখ লাগানো যাবে না
- সাবান বা কোন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যাবে না
- প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করতে হবে
- চুলকানি হলে অন্য কারো পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করা যাবে না
- অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রহণ করুন
চুলকানির ঔষধের নাম
আজকে আমরা চুলকানির ওষুধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং কি কারণে চুলকানি হয় এবং চুলকানি প্রতিরোধে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি চুলকানির ঔষধের নাম আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- মরা নখ ভালো করার উপায়
- ঘারোয়াভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায়
- চোখের এলার্জির ড্রপের নাম, চোখের এলার্জি দূর করার উপায়