চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
চিকেন পক্স সাধারণত কমবেশি আমাদের জীবনে সবারই একবার হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ছোয়াছে রোগ বলেই জানা যায়। তবে চিকেন পক্স হলে ভয়ের কিছু নেই। নিয়মিত ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করলে খুব সহজেই চিকেন পক্স থেকে সুস্থ হওয়া যায়। চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে কিনা এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
আজকে আমরা চিকেন পক্স হলে গোসল করা যাবে কিনা বা চিকেন পক্স হলে কি কি করা যায় কি করা যায় না সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
চিকেন পক্স কি?
জল বসন্ত বা চিকেন পক্স একটি ছোয়াচে রোগ যা ভেরি সেলা জোস্টার ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। চিকেন পক্স যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। তবে দশ বছরে কম বয়সীদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি সর্দি জামা কাপড় সরাসরি অন্য কারো হতে পারে।
সাধারণত একবার চিকেন পক্স হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। যার কারণে পুনরায় সংক্রমণ খুবই কম হয়। আর যদি হয়ে থাকে তখন জোস্টার নামে একটি রোগ হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন – জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম, আশারায়ে মুবাশশারা
চিকেন পক্স হওয়ার কারণ
চিকেন পক্স হওয়ার কারন জানা দরকার। নিচে কারন গুলো বর্ননা করা হল-
- জল বসন্ত বা চিকেন পক্স একটু সংক্রামক জোস্টার নামক একটি ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে
- এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির জামাকাপড় বা তার হাঁচি কাচের সংস্পর্শে আসলেও চিকেন পক্স হয়
- চিকেন পক্সের পানি সরাসরি শরীর অন্য কোন জায়গায় লাগলে বা অন্য কোন গায়ে লাগলে চিকেন পক্স হতে পারে
চিকেন পক্সের লক্ষণ
চিকেন পক্সের লক্ষণ গুলো হল-
- পক্সের ভাইরাস শরীরে প্রবেশে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই চিকেন পক্সের লক্ষণ দেখা দেয়
- প্রথমে স্কিনে বা ত্বকে ঘামাচির মত গুটিগুটি ফুসকুড়ি উঠতে থাকে যা পরবর্তীতে পানি ফোস্কাতে পরিণত হয়।
- ফুসকড়ি দেখা দেওয়ার দুই থেকে তিন দিন আগে থেকে শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়।
- পেট ব্যথা হতে পারে
- লালচে ফুসকুড়ি
- চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করে
- ফুসকরের পানি জমে যা পরবর্তীতে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়
- কাশি
- পাতলা পায়খানা হয়
- ১৫ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়
চিকেন পক্স কিভাবে ছড়ায়
চিকেন পক্স আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি ত্বকের সংস্পর্শে ব্যবহৃত জামাকাপড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তি তাকে ফুসকুড়ি দেখা যাওয়ার দুই দিন আগে থেকেই শুকিয়ে যাওয়া ফুসকুড়ির খোসা থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে বলে জানা যায়।
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি এবং ফুসকুড়ি খোসা বাতাসে বাহিত হয়েও এই রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে এটি ছড়াতে শুরু করে।
আরো পড়ুন – দুই লাইনের রোমান্টিক স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি
চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে ?
চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে কিনা অনেকেই জানতে চান। চিকেন পক্স হলে রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখা উচিত এতে করে রোগীর চুলকানো জ্বালাপোড়া কম হবে। তাই রোগীকে প্রতিদিন গোসল করানো জরুরী। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে কখনোই গোসল করানো যাবে না।
নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করালে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এর উপাদান পক্স নির্মূল করতে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। জ্বর ঠান্ডা বেশি থাকলে রোগীর শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। এতে করে কিছুটা হলেও আরাম মিলবে।
চিকেন পক্সের জটিলতা
সাধারণত বড়দের চাইতে শিশুদের চিকেন পক্স বেশি ক্ষতি করে থাকে। সেজন্য আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসনালী এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে জীবন নাশের কারনও হতে পারে। এছাড়াও ত্বক্বে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে বিভিন্ন গর্তের সৃষ্টি করতে পারে।
চিকেন পক্স প্রতিরোধে করণীয়
চিকেন পক্স প্রতিরোধ করতে হলে-
- সর্বপ্রথম যেকোনো বয়সের মানুষেরা জল বসন্তের টিকা নিতে পারেন
- তবে একবার চিকেন পক্স আক্রান্ত হলে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে
- চিকেন পক্স প্রতিরোধে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবসময় আলাদা করে রাখতে হবে
- বাইরের বাতাস বা খোলা জায়গায় নেওয়া যাবে না এতে করে অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির জামা কাপড় বা ব্যবহারের জিনিসপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না
- হাচি বা কাশির সময় হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করছে কিনা বা তার সংস্পর্শে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
চিকেন পক্সের চিকিৎসা
ভাইরাস জনিত এই চিকেন পক্স এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত সাবধানতা এবং ডাক্তারি পরামর্শ মেনে চললে চিকেন পক্স নিজ থেকে ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে। যেমন- জ্বলা চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তার বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে থাকেন।
আবার রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে কখনো কখনো ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার ঔষধ সেবন করতে দেয়া হয়।
চিকেন পক্স হলে করণীয়
চিকেন পক্স হলে করনীয় কি তা বর্ননা করা হল-
- যেহেতু চিকেন পক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই রোগীকে সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে।
- রোগের ব্যবহৃত পোশাক যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
- রোগীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর নজর দিতে হবে
- নিমপাতা সেদ্ধ করে প্রতিদিন গোসল করাতে পারেন
- যদিও চিকেন পক্স হলে শরীর অনেক চুলকায় কিন্তু কষ্ট হলেও শরীরের জন্য চুলকানো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে
- চিকেন পক্সের ক্ষতস্থান নখ দিয়ে খুটলে স্থায়ীভাবে দাগ বসে যায় তাই নখ দেওয়া যাবে না কারণ নখের মাধ্যমে আরো সংক্রমণ করতে পারে।
- সাধারণত বিশেষ কোনো ঔষধের প্রয়োজন হয় না নিয়ম মেনে চলে ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই চিকেন পক্স ভালো হয়ে যায়
- জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে
- অতিরিক্ত চুলকানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন
- চিকেন পক্স হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এবং সবজি খেতে হবে।
চিকেন পক্স হলে যেসব খাবার খেতে হবে
চিকেন পক্স হলে কোন ধরনের খাবার খাওয়া যায় নিচে তা উল্লেখ করা হল-
- মাছ মাংস ডিম দুধ সবই খেতে পারবে
- পুষ্টিকর খাবার খেলে রোগ আরোগ্য হতে কম লাগবে
- চুলকানি জাতীয় ঔষধ এবং সাথে কোন ব্যাকটেরিয়া যাতে সংক্রমণ না করে তাই ঔষধ দেওয়া যেতে পারে
- এ সময় রোগীকে বেশি বেশি করে ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
- মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে পাতলা স্যুপ খাওয়াতে পারেন
- ইলিশ চিংড়ি মাছ ছাড়া যে কোন মাছের পাতলা ঝোল আর ভাত খাওয়ানো যেতে পারে
- ডাল খুবই উপকারি। এ সময় ডালের পানি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে
- এছাড়া অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে
- তবে লেবুর রস খাওয়ানো যাবে না
চিকেন পক্স হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
নিচে চিকেন পক্স হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না তা উল্লেখ করা হল-
- চিকেন পক্স হলে এমন কোন খাবার খাওয়া যাবে না যা থেকে রোগীর এলার্জি হতে পারে
- এমন কোন খাবার যা রোগের পূর্ব থেকে এলার্জি বা চুলকানি সমস্যা দেখা দিত
- এ সময় চর্বি জাতীয় খাবার
- মাখন
- তেল
- বাদাম
- পনির
- নারিকেল বা চকলেট জাতীয় খাবার চিকেন পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে
- অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবারও খাওয়া যাবে না
- আখরোট
- কিসমিস
- বাদাম
চিকেন পক্সের ঔষধ
সাধারণত চিকেন পক্স এর জন্য ঔষধের প্রয়োজন হয় না। এটি সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং ঘরোয়াভাবে পরিচর্যা করলে সহজেই ভালো হয়ে যায়। তবে বাজারে অতিরিক্ত চিকেন পক্স হলে যে সমস্ত ওষুধ রয়েছে তা হলো-
- পক্স ৫০০ এমজি ট্যাবলেট
- প্যারাসিটামল ট্যাবলেট
- নাপা ট্যাবলেট
চিকেন পক্স সম্পর্কে সতর্কতা
ত্বকে চিকেন পক্স উঠলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ছয় মাসের কম বয়সী শিশু চিকেন পক্স হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। কেননা ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের সংবেদনশীলতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় খুবই কম থাকে এবং এদের সংক্রমণ বা সংক্রমনের সাথে আরো বিভিন্ন রোগের ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
তাই দেরি না করে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
আজকে আমরা চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –