হঠাৎ ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ?

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ

ঘাড়ে ব্যথা আমরা প্রায় মাঝেমধ্যে অনুভব করে থাকি। কিছু ক্ষেত্রে এই ঘাড় ব্যথা খুবই সাধারণ কারণে হয়ে থাকে এবং অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় ঘাড়ের ব্যথা শরীরের বিভিন্ন জটিল রোগের লক্ষণ ও হতে পারে। তাই অনেকে ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ ঘাড় ব্যথার কারণ এবং ঘাড় ব্যাথার চিকিৎসা এবং ঔষধের নাম সহ জানতে বিস্তারিত google এ সার্চ করে থাকেন।

আজকে আমরা ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি এই সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – সেক করলে কি হয়? সেক এর উপকারিতা অপকারিতা

ঘাড় ব্যথা হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। কি কি কারণে ঘাড় ব্যথা হয় তা জানতে হবে। নিচে ঘাড় ব্যথার কারণ গুলো বর্ণনা করা হলো-

  • আঘাত- পড়ে যাওয়া অথবা এক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে ঘাড়ে অনেক সময় অতিরিক্ত আঘাত লাগতে পারে। অন্যদিকে ঘাড়ের হাড় ভেঙে গেলে মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হঠাৎ মাথার নিচ থেকে ঘাড়ে আঘাতকে সাধারণত কষাঘাত বলা হয়। বিভিন্ন আঘাতের কারণে সাধারণত ঘাড় ব্যথা হয়ে থাকে।
  • ঘাড়ের পেশিতে টান লাগা- আমরা প্রতিদিন কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে ঘাড় ব্যথার শিকার হতে পারি। যেমন ভুলভঙ্গিতে বসা বা সোয়া অথবা কাজ করা অথবা অবস্থান পরিবর্তন না করে খুব বেশি সময় ধরে ডেকে কাজ করা। ঘুমের সময় ঘাড় বাকা রাখা এবং ঘাড়ে ঝাকুনি লাগা সহ বিভিন্ন কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।
  • মেরিনজাইটিস- মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে ঘিরে থাকে এক ধরনের পাতলা টিস্যুর জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহকে মেনিনজাইটিস বলে। লক্ষণ গুলো হলো মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি করা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা। এটি অনেক সময় জীবনঘাতী ও হয়ে উঠতে পারে। তাই যদি কারো মেরিনজাইটিস লক্ষণ থাকে তবে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • মেরুদন্ডের ক্যান্সার
  • জীবাণু সংক্রমণ
  • টিউমার

ঘাড় ব্যথার লক্ষণ

হঠাৎ ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ তা অনেকেই জানতে চান। ঘাড় ব্যথার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। নিচে ঘাড় ব্যথার নানা রকম লক্ষণগুলো বর্ণনা করা হলো-

  • অনেকেরই ঘাড় ব্যথা হলে তাদের ঘাড় শক্ত বা আটকে যাওয়ার মত অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ঘাড়ের নড়াচড়াও করানো সম্ভব হয় না।
  • অনেকের ক্ষেত্রে ব্যথা  ছুরি কাঘাতের মত অনুভূত হয়।
  • ঘাড়ের ওপরে নিচে ডানে-বায় ঘাড় নাড়াতে গেলে বা ঘাড়ের ব্যথা তীব্রভাবে অনুভব করা যায়।
  • ঘাড়ের ব্যথা ছাড়িয়ে যাওয়া অথবা অসারতা
  • ঘাড়ের ব্যথা আপনার মাথা কাধ এবং বাহুতে ছড়িয়ে যেতে পারে।
  • যদি আপনার ঘাড়ে ব্যথা কোন স্নায়ুর জটিলতার জন্য হয়ে থাকে
  • ঘাড়ে ব্যথা শুরু হলে তা সার্বিক ও জেনিক মাথাব্যথা নামক মাথাব্যথা তৈরি করতে পারে
  • মাথা ব্যথার সাথে ঘাড়ে ব্যথা মাইগ্রেইন মাথা ব্যথার লক্ষণ হতে পারে
  • অনেক সময় ডাক্তারের কাছে মেরুদন্ড পরীক্ষা করার কারণে ও ঘাড়ের ব্যথা বাড়তে পারে
  • ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে বাহুতে ঝিমঝিম শিরশির অবস্থা অনুভূত হতে পারে
  • সেই সঙ্গে হাত দিয়ে কোন কাজ করতে অসুবিধা হয়

ঘাড় ব্যথায় কার ঝুঁকি বেশি ?

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ঘাড় ব্যথার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। সাধারণত ৪০ বছরের বয়সের পর থেকে পরিবর্তন শুরু হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এর আগেও হালের ক্ষয় হওয়া শুরু হয়ে যায় এবং হাড় ঝুকিয়ে কাজ করতে হয়। এমন সব পেশার মানুষদের এই রোগ বেশি দেখা যায়।

শুধু চেয়ার টেবিলে বসে যারা কাজ করেন যেমন ব্যাংকার নির্বাহী কম্পিউটারে কাজ, ঘাড়ে ঝাঁকনি লাগে এমন পেশা মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালকদেরও এই ঘাড় ব্যথার রোগ হতে পারে।

আরো পড়ুন  – গলা ব্যাথার ঔষধের নাম, গলা ব্যথার ঘরোয়া টোটকা

হঠাৎ ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ

বিভিন্ন কারণে হঠাৎ ঘাড় ব্যাথা হতে পারে। তবে হঠাৎ ঘাড় ব্যথা হলে দেখতে হবে মেরুদন্ডের কোন সমস্যা হয়েছে কিনা অথবা ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়েছে কিনা। হঠাৎ ঘাড় ব্যথা এই দুটি রোগের লক্ষণ হতে পারে। আবার অনেক সময় প্রেশার বেড়ে গেলে ও ঘাড় ব্যথা হতে পারে। তাই হঠাৎ ঘাড় ব্যথা হলে অবশ্যই দেরি না করে একজন ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

হঠাৎ ঘাড় ব্যথা হলে করণীয়

ঘাড় ব্যথা হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে জানতে হবে-

  • সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মত পরিশ্রমের কাজ অনেক বেশি সময় ধরে করলে ঘাড় ব্যথা আরো বেড়ে যায় তাই একটানা না করে মাঝে মধ্যে বেরোতে নিতে হবে।
  • মাঝারি বা শক্ত সমান বিছানায় এক বালিশের চিৎ হয়ে শুতে হবে।
  • ঘুমানোর সময় ঘাড়ের নিচে বালিশ দিতে হবে যাতে করে মেরুদন্ডের বেশি সমতল থাকে।
  • কাঁধের উপর স্ক্র্যাপ সহ ভারী ব্যাগ বহন এড়িয়ে চলুন।
  • অতিরিক্ত ওজন ঘাড়ে চাপ তৈরি সৃষ্টি করে
  • ধুমপায়ীরা ঘাড়ে ব্যথা বেশি ভুগেন
  • ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ধূমপান ছেড়ে যেতে হবে
  • মুঠোফোনে কথা বলার সময় কান এবং কাঁধের মধ্যে ফোনটি টিকিয়ে রাখবে না। প্রয়োজন হেডফোন বা স্পিকার অন করে নিন।
  • কাজের টেবিল চেয়ার এবং কম্পিউটার এমন ভাবে রাখুন যাতে করে মনিটর চোখের স্তরে সমান থাকে দুই হাটু হিপের কিছুটা নিচে থাকবে।
  • চেয়ারে হাতল ব্যবহার করা যেতে পারে
  • টেবিলে নিচু হয়ে বসা যাবেনা
  • দীর্ঘ সময় একটানা বসে কাজ না করে এক ঘন্টা পর পর দশ মিনিট  রেস্ট নিতে হবে।
  • যদি দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করে আমাদের কম্পিউটারে কাজ করে তবে উঠে পড়ুন এবং ঘাড় ও কাজ সামনে পেছনে প্রসারিত করুন
  • শারীরিক ভঙ্গি স্বাস্থ্যকর করতে হবে
  • বসে থাকার সময় আপনার মেরুদন্ড যেন সরলরেখায় থাকে এবং কান সরাসরি আপনার কাঁধের উপরে থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা

ঘাড় ব্যথার জন্য সাময়িক ব্যথার ওষুধ সেবন করতে পারেন। এছাড়া প্রিগা বালিন বা এন্টিডিপ্রেশন ঔষধ খান এবং নার্ভের ব্যথা দূর করতে দুশ্চিন্তা কমাতে মাংসপেশী শিথিল করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। মেরুদন্ডের হাড়ের নিচের দিকে জয়েন্ট বা ঘাড়ের পেশীতে স্টোরেটিং ইনজেকশন নেয়া যায়।

অস্ত্রপাচার- যদি কোন ভাবে ঘাড় ব্যথা না কমে তবে চিকিৎসকরা অস্ত্রপাচারে সিদ্ধান্ত নেন।

ফিজিওথেরাপি- ব্যথা কমানোর জন্য ফিজিওথেরাপিস্টারের কাছ থেকে থেরাপিও নিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থেরাপিস্ট ব্যায়াম ও মাসাজ দেবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ঘাড় ব্যাথার বিপরীত দিকে ঘোরার চেষ্টা করুন দরকার হলে বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিতে হবে।

তবে খুব বেশি ব্যথা থাকা অবস্থায় ব্যায়াম করা যাবে না। মনে রাখতে হবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘাড় ব্যথার চিকিৎসার উপকার পাওয়া যায়।

সার্ভেকেল কলার- ঘাড়কে সাপোর্ট দিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এমন একটি নরম করার পরে থাকতে পারেন। এটি ঘাড়ে কাঠামোগত চাপ বন্ধ করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। তবে এটি তিন ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি কলার ব্যবহার করা উচিত হবে না।

এতে করে ঘাড়ের ক্ষতি হতে পারে।

ট্রাকশন- দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথা দূর করতে ওজন বেড়ে একটি বায়ু ব্লাডার ব্যবহার করে ট্রাকশন দেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। ঘাড়ে ব্যথা বিশেষত নার্ভ ফ্লুট জ্বালা সম্পর্কিত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চিকিৎসা মূলত অর্থপেডিক্স চিকিৎসকের পরামর্শ একজন ফিজিওথেরাপি এটা দিয়ে থাকেন।

ঘাড় ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায়

এখন আমরা জানব কিভাবে ঘরোয়া ভাবে ঘাড় ব্যথা সারানো যায়। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

১। ব্যাথার স্থানে আইস ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি আইস ব্যাগ বরফের তোয়ালে জড়িয়ে নিয়ে এবার দিনে কয়েকবার সেটি ঘাড়ে স্যাক দিতে হবে।

২। হালকা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন।

৩। লো সেটিং এ কোন হেডিং প্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪। তারপর আলতো করে কাজ করুন ঘাড় বাকান এবং আস্তে আস্তে ঘোরান।

৫। সাধারণ ঘাড় ব্যথা মাসাজে ভালো হয়ে যায়। তবে প্রশিক্ষিত ব্যক্তি দিয়ে মাসাজ করাতে হবে।

৬। আপেল ভিনেগার এন্টিঅক্সিডেন্ট ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যে ভারপ্রেশার ঘাড়ের বেশি স্ট্রেস কমাতে এবং ব্যাথা কম করতে সাহায্য করে। একটু টিস্যু পেপার আপেল ভিনেগার ভিজিয়ে নিয়ে টিস্যটিকে আধাঘন্টা ঘাড়ের উপর রেখে দিন। যতদিন না ব্যথা কমছে দিনে দুইবার এই ব্যবহার করতে পারেন।

৭। ঘাড় ব্যথা কমাতে যোগ আসনগুলোর অভ্যেস করতে পারেন। এটি খুবই কার্যকরী। ভরদ্বাজন বালা সন আসন কি আপনার ঘাড় এবং পেছনে প্রসারিত করবে। নিয়মিত যজ্ঞা আসন করলে ঘাড় ব্যথা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।

৮। ব্যথা নাশক লোকাল স্প্রে জেল দিয়ে ভাল ভাবে মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে যায়।

৯। আবার হালকা গরম পানিতে গোসল করে এরপর তেল হালকা গরম করে মালিশ করতে পারেন। সকাল বিকাল দুইবেলা মালিশ করলে ঘাড়ের ব্যথায় আরাম পাওয়া যাবে। ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ঘাড় ব্যথার ঔষধ

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঘাড় ব্যথার ঔষধ পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো-

  • jolydep 30 mg
  • প্যারাসিটামল
  • NSAID

ঘাড় ব্যথার মলম

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঘাড় ব্যথার মলম পাওয়া যায়। নিচে সেগুলো বর্ননা করা হল-

  • Duclofenac
  • Kapsikam
  • Fastum
  • Voltaren
  • Finalgel
  • Finalgon
  • Hondroksin
  • Ibuprofen
  • Move
  • Vicks
  • Ketoprofen

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

ঘাড় ব্যথা অতিরিক্ত হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের কারণে অনেক সময় ঘাড় ব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়। ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ তা অনেকেই জানেন না। সাধারণ ঘাড় ব্যথা হলে তা কিছু সময়ের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। বারবার ঘাড় ব্যথা হলে বা দীর্ঘসময় ঘাড় ব্যথা থাকলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ

ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ

আজকে আমরা হঠাৎ ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে।আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং ঘাড় ব্যথা কিসের লক্ষণ আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply