গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
বর্তমানে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের কাছে গ্রামীণ ব্যাংক অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করায় বেশ নাম এবং প্রশংসা অর্জন করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হলেন নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। গ্রামীণ ব্যাংকে বিখ্যাত হওয়ায় অনেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য গুগলের সার্চ করে থাকেন।
তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা, লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা এবং লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – সোনালী ব্যাংক স্কলারশিপ আবেদনের নিয়ম 2023
গ্রামীণ ব্যাংক কি?
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং এটি একটি সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ভূমিহীন এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচ জনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে থাকে এবং এই ঋণের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দেয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮% ।এটি বাংলাদেশের বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকা ভুক্ত নয়।
আরো পড়ুন – ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩
গ্রামীণ ব্যাংকের লোন ক্যাটাগরি
গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীদের লোন দিয়ে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংক যেসব ক্ষেত্রে ঋণ দেয় নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
- গ্রামীণ ব্যাংক কৃষি লোন
- গ্রামীণ ব্যাংক বাড়ী নির্মাণ লোন
- গ্রামীণ ব্যাংক পশু ক্রয় করার লোন
- গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা লোন
- গ্রামীণ ব্যাংক মৌসুমী লোন
- ক্ষুদ্রঋণ গ্রামীণ ব্যাংক
- উদ্দ্যোক্তা লোন
ক্ষুদ্রঋণ
গ্রামীণ ব্যাংক যার জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেটি হলো ক্ষুদ্রঋণ। খুব সহজ এবং দ্রুত প্রক্রিয়ায় এই ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক কৃষক থেকে শুরু করে যে কোন মহিলা এই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে পারে। সামান্য কিছু শর্ত মোতাবেক এই ঋণ প্রদান করা হয়। এই ঋণে প্রত্যেক দল অন্ততপক্ষে পাঁচজন সদস্য হতে হবে।
এই ঋণ নেওয়ার প্রসেস খুবই সহজ। দেশে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকা আপনার নিকটবর্তী গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করার মাধ্যমে সহজে সেখান থেকে ঋণ গ্রহণ করা যাবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫০০০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ পাওয়া যাবে। প্রতি সপ্তাহে একজন এজেন্ট এসে আপনার কাছ থেকে ঋণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে যাবে।
কৃষি ঋণ
কৃষককে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য এবং কৃষি জমি চাষ করার জন্য যে ঋণের প্রয়োজন হয় এবং কৃষি সমাজকে উন্নত করে এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে গ্রামীণ ব্যাংক কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই কৃষকদের বিভিন্ন কাজের জন্য ঋণ প্রদান করে থাকে। একজন কৃষক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। সেগুলো হল-
- জমি ক্রয় বা বর্গা নেওয়া
- কৃষি যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম ক্রয় করা
- বীজ সার এবং কীটনাশক এর ক্ষেত্রে
- মৎস্য চাষ পশুপালন এবং অন্যান্য কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে
- কৃষি উৎপাদন এবং বিপণন করতে
কৃষি ঋণের সুদের হার খুবই কম। মাত্র ৬% সুদের হারে এরই ঋণ প্রদান করা হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি লোন যা সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য হতে পারে। এই ঋণ পাওয়ার জন্য কৃষকের নিজস্ব জমি এবং কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
পশু সম্পদ ঋণ
গ্রামীণ এলাকায় কৃষকদের তাদের পশু সম্পদ ক্রয় বা উন্নয়নের জন্য বা খামার পরিচালনার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে নিম্নলিখিত পশু গুলো পালন করতে পারবেন। সেগুলো হলো-
- গরু
- মহিষ
- ছাগল
- ভেড়া
- হাঁস
- মুরগি
- মাছ
এই পশুপালনের জন্য বা ঋণ গ্রহণের জন্য আপনাকে অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে এবং পশুপালনে অভিজ্ঞতা এবং উপযুক্ত স্থান থাকতে হবে।
উদ্যোক্তা ঋণ
উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা সম্প্রসারণ করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোক্তার আইন প্রদান করে থাকে। উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কাজের জন্য ঋণ নিয়ে থাকে। যেমন-
- পণ্য ও সেবা ক্রয়
- অফিস ও কারখানা নির্মাণ বা ভাড়া দেওয়া
- যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম ক্রয়
- কর্মচারী নিয়োগ
- বিপণন প্রচার বা অন্যান্য খরচ
এর ক্ষেত্রে ৬ পার্সেন্ট সুদের হার হবে এবং সর্বোচ্চ দুই বছর অবদি মেয়াদ থাকবে। তবে বিভিন্ন কন্ডিশন অনুযায়ী এই মেয়াদ কিছুটা বাড়ানো যাবে। এই ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদনকারী কে কমপক্ষে ১৮ বছরের হতে হবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হিসেবে বেসিক কাগজপত্রের পাশাপাশি আয়কর সনদ এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
হাউজিং লোন
মাথার উপর আশ্রয় পর্যাপ্ত খাদ্য এবং মানবজাতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। সে ধারণাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৪ সাল থেকে হাউজিং লোন প্রোগ্রাম চালু করে। বাড়ি হল একটি মানুষের নিরাপত্তার প্রতিক তাই বাড়ি বানানোর জন্য লোন নেওয়া যায়।
শিক্ষা লোন
আপনি যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন এবং আপনার শিক্ষাগত অর্থের প্রয়োজন হয় বা অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষা ঋণের সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যেসকল সেক্টর শিক্ষার্থীদের লোন দেয়া হয় তারা হলো-
- মেডিকেলের স্টুডেন্ট
- ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
- এম এ/ এমএস/ এমবিএ এর স্টুডেন্ট
- গ্রামীন ব্যাঙ্ক এর অন্তর্ভুক্ত ১৭ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
শিক্ষা লোন পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ১ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হতে হবে এবং শিক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ২০ থেকে ২৫ বছর। এ ক্ষেত্রে ছাত্র থাকা অবস্থায় এ লোন পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা নেই।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার পদ্ধতি
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যদি লোন বা ঋণ গ্রহণ করতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহক হতে হবে। অবশ্যই আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে কমপক্ষে দু’বছরের লেনদেন থাকতে হবে। যদি গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে আপনার দুই বছরের লেনদেন না থাকে তাহলে আপনি লোন গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না। যদি আপনার লেনদেন থাকে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাহলে গ্রামীন ব্যাংকের কর্মকর্তা আপনার সাথে নিজ থেকে লোনের ব্যাপারে কথা বলবে।
তাছাড়া আপনি ঋণ গ্রহণ করতে চাইলে সরাসরি গ্রামীণ ব্যাংকের মূল অফিসে চলে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে একাউন্টের ব্যাপারে তাদেরকে জানাবেন এবং সকল ইনফরমেশন দিবেন। তারপর তারা একটি ফরম দিবে গ্রামীনফোন থেকে যে ফর্মটা আপনাকে দেওয়া হবে সে ফর্মটি পূরণ করতে হবে এবং তাদেরকে পুনরায় জমা দিতে হবে। ফরম জমাদার পরবর্তী সময়ে তারা আপনাকে লোন দেওয়ার জন্য তৈরি হবে। এরপরে ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনি সহজে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন পেতে পারেন।
গ্রামীণ ব্যাংক ঋণের জন্য শর্ত ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য গ্রাহকে অবশ্যই কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে শর্তগুলো হল-
- শিক্ষা ঋণ ছাড়া অন্যান্য লোনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে
- আবেদনকারী জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে
- যে ব্যক্তি আবেদন করবেন তার নিজস্ব বাড়িঘর থাকতে হবে
- প্রথমবার বা প্রাথমিকভাবে লোন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পাবে
- ঋণের ৫% সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রদান করতে হবে
- নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে
- সত্যায়িত চারিত্রিক সনদপত্র জমা দিতে হবে
গ্রামীণ ব্যাংকের ঠিকানা
হেড অফিস- মিরপুর ২ ঢাকা ১২১৬ বাংলাদেশ
ফোন- ০২৫৮০৫৫৬২৮, ০২৫৮০৫৫৬৫২
email- [email protected]
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
- সবচেয়ে সুবিধা বেশি হল যদি আপনি ছাত্র অবস্থায় কোন ঋণ গ্রহণ করেন তাহলে আপনি যতদিন পড়াশোনা করছেন বা শিক্ষার্থী হয়ে রয়েছেন ততদিন পরিশোধ করতে হবে না।
- যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কম ঋণ প্রদান করে তাই কম সময়ের মধ্যে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে ফেলা যায়
- আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট এমাউন্ট মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন
- ক্ষুদ্র ও কৃষি লোন এর ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক হারে ঋণ পরিষদের সুবিধা রয়েছে
- অধিক সেক্টর ও কন্ডিশনার উপর নির্ভর করে মুনাফার হার কম বেশি হয়
- তাই যারা একটু বেশি অসচ্ছল তাদের ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনামূলক কম থাকে
- খুব সহজ পদ্ধতিতে এবং দ্রুত ঋণ পাওয়া যায়
গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার
গ্রামীন ব্যাংক লোনের ধরনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের সুদের হার ঠিক করা হয়। ক্রমবর্ধমান ব্যালেন্স রীতিতে মৌলিকের সুদের হার বার্ষিক .২০% ।ক্ষুদ্র এন্টারপ্রাইজ বা ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ২৫ পার্সেন্ট। বার্ষিক ব্যালেন্সের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ৫% সুদের হার রয়েছে। পতনশীল ভারসাম্য ভিত্তিতে সুদের হার বার্ষিক চার পার্সেন্ট, ফসল নিয়ে সুদের হার বার্ষিক ৮% ক্রমবর্ধমান সুদের হার বার্ষিক ১২ শতাংশ।
গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
আজকে আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা সহ গ্রামীণ ব্যাংকের লোন নেওয়ার নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- সোনালী ব্যাংক স্কলারশিপ আবেদনের নিয়ম 2023
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩
- ব্র্যাক ব্যাংক ম্যাট্রিক্স একাউন্ট কি?