গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়
মাতৃত্ব নারী জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মুহূর্ত। এই সময় মায়েরা গর্ভের সন্তান নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকেন। কি কি খেলে গর্ভের সন্তানের জন্য উপকার হবে এবং কি কি খেলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে সেসব নিয়ে। গর্ভাবস্থায় অনেকেই অনেক কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকে। অনেকেই মুড়ি খুব পছন্দ করেন কিন্তু গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না।
আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন, মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন
গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়
মুড়ি আমাদের দেশের গ্রাম এবং শহরের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পরিচিত একটি খাবার। এই খাবারটি আমরা বিভিন্ন সময় মুখরোচক অথবা আড্ডা দেয়ার উপকরণ হিসেবে খেয়ে থাকি। কিন্তু অতি সাধারণ এই খাবারের মধ্যে যে অসাধারণ কিছু উপকারিতা লুকিয়ে আছে। এটা হয়তো অনেকেই জানে না আজকে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় এবং মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় আপনার যদি কোন গর্ভ অবস্থায় মুড়ি খাওয়ার ইচ্ছা জাগে তাহলে নিশ্চিন্তে মুড়ি খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যায় সেই পরিবর্তনগুলোর কারণে শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হতে পারে। যার কারণে শরীরে নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। মুড়ির মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম প্রোটিন আয়রন ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজ উপাদান।
যা শরীরের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে এবং শরীরের গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখতে ও সাহায্য করে। মুড়ির মধ্যে এসিড জাতীয় উপাদান কম থাকায় মুড়ি খেলে গর্ভাবস্থায় এসিডিটি সমস্যা অনেক কম হয়। মুড়ির মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্য উপাদানটি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে বলে গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে তাদের এনার্জি ধরে রাখতে পারেন।
এছাড়াও এর ফলে শরীরে রোগ জীবাণু কম আক্রমণ করে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মা ও শিশু দুজনের সুস্থ থাকে। তবে যেকোনো জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় কেননা মুড়িতে এসিড অনেক থাকে এবং হজম হতে সময় নেয় তাই শুকনো মুড়ির চেয়ে ভেজানো মুড়ি চিনি বা ভোট দিয়ে নারিকেল দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে খুব সহজে হজম হবে এবং বারবার খিদা লাগবে।
আরো পড়ুন – ওটস কি – ওটস খাওয়ার নিয়ম
মুড়ি খেলে কি ওজন কমে?
হালকা নাস্তা হিসেবে মুড়ি আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি খাবার। তবে গর্ভাবস্থা সহ অন্যান্য সময় অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এই মুড়ি খেলে শরীরের ওজন কমে কিনা। মুড়ি হল লো ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার মুড়ির মধ্যে যেহেতু ক্যালোরি পরিমাণ কম থাকে এ কারণে নিঃসন্দেহে মুড়ি ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও মুড়ির মধ্যে ফাইবার থাকা এটি হজমে খুবই সাহায্য করে থাকে।
যার ফলে শরীরের ডাইজেস্টিক সিস্টেম ভালো থাকে। মুড়ি শরীরের শর্করা চিনির পরিমাণ কম রাখতেও সাহায্য করে যেটির কারণে শরীরে ওজন বাড়তে পারে না। অনেক সময় যাদের ওজন বেড়ে যায় তারা ভাতের বদলে মুড়ি খেতে পারেন। এতে করে শরীরের চর্বী কম জমবে এবং খেতেও মিটবে।
মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা
মুড়ির মধ্যে রয়েছে ক্যালোরি কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফাইবার পটাশিয়াম থায়ামিন ফসফরাস নিয়েস ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি এ কারণে মুড়ি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে- মুড়ি হলো লো ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। মুড়িতে ক্যালরি মাত্র অল্প পরিমাণে থাকার কারণে এটি খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং মুড়ি খেলে পেট ভরা থাকে বৃথায় অন্য খাবারও বেশি খাওয়া হয় না। তাই মুড়ি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করে- মুড়ির মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করে। শরীরের হাড়ে এবং দাঁত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই মুড়িতে ক্যালসিয়াম থাকার ফলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে এবং হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ- মানুষের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মুড়ির মধ্যে অল্প পরিমাণে সোডিয়াম রয়েছে। এ কারণেই মুড়ি খেলে পেট ভরা থাকে এবং পাশাপাশি একটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
পেটের অ্যাসিডিটি দূর করে- নিয়মিত মুড়ি খাওয়ার অভ্যেস করলে এটি পেটে এসিডের সমস্যা দূর করবে ।দ্রুত পেটের গ্যাস সারানোর জন্য মুড়ি পানিতে ভিজিয়ে খেলে অনেক তাড়াতাড়ি ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- মুড়ির ভিতরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকায় নিয়মিত মুড়ি খেলে আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বাড়ে এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারে না।
রাতে মুড়ি খেলে কি হয়
হালকা খাবার হিসেবে আমরা অনেকেই মুড়ি খেয়ে রাতে খাবারের জন্য পারফেক্ট মনে করি। কিন্তু বিষয়টি আসলে জটিল মুড়ি হালকা জাতীয় খাবার হলেও রাতের খাবার এসে হিসেবে এটি মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সম্প্রতি এক গবেষণা দেখা গেছে রাতের খাবার হিসেবে মুড়ি খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন মুড়ি মধ্যে কার্বোহাইড্রেট আপনার শরীরে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে ডায়াবেটিসের সমস্যা এবং শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে।
শুকনো মুড়ি খাওয়ার অপকারিতা
মুড়ির বেশ উপকারে দিক থাকলেও শুকনো মুড়ি খাওয়ার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা এ সময় শুকনো মুড়ি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ মুড়ির মধ্যে থাকা ইউরিক এসিড আপনার রক্তচাপকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। মুড়ির মধ্যে যেহেতু গ্লাইসি মাইক রয়েছে যেটি রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
তাই অতিরিক্ত মুড়ি খাওয়া ডায়াবেটিস রোগের জন্য ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর কার্বোহাইড্রেট থাকার ফলে একটু মুড়ি খেলে ওজন বৃদ্ধি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের স্থূলতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খেলে মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক। তবে খাবারে যাতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম থাকে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার প্রতিদিন গর্ভবতীর খাবার তালিকা রাখতে হবে-
- দুধ অথবা দুধ জাতীয় খাবার
- ডাল
- সয়াবিন
- বাদাম জাতীয় খাবার
- মিষ্টি আলু বা রাঙ্গা আলু
- মাছ বা সামুদ্রিক মাছ
- ডিম
- সবুজ শাকসবজি
- তেল বিহীন মাংস বা রেডমিট যা রক্তে গাড় করতে সাহায্য করে
- ব্লু বেরি
- গোটা শস্য বা গম
- লালাআটা বা লাল চাল
- অ্যাভোকাডো
- ড্রাই ফ্রুটস
- মাছের তেল
- বিশুদ্ধ পানি
- মুরগির মাংস
- খেজুর
- কিসমিস
- পাঁচমিশালী ডাল
- সিয়াসিড
- কলা
গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
- চা
- কফি
- অ্যালকোহল
- সিগারেট
- অনির্বাচীর কলিজা
- কাঁচা গরুর দুধ
- কাঁচা ডিম
- আনারস
- কাঁচা বা পাকা পেঁপে
- আঙ্গুর
- ভাজাপোড়া জিনিস
- অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় মাংস
- অল্প সেদ্ধ তরকারি
- পেটে গ্যাস হয় এমন কোন খাবার
- এলার্জিজনিত খাবার
- ফ্রিজের ঠান্ডা জিনিস
- পচা বাসি জিনিস
- মেয়াদ উত্তীর্ণ জিনিস
মন্তব্য
আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সচেতনতার জন্য শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- আবেগী বন্ধু বিদেশ যাওয়ার স্ট্যাটাস
- গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়
- আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়