গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতীদের সমস্যা গুলো খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। এ সময় পুরো প্রেগনেন্সিতে গ্যাস এর খুবই সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। তাই অনেকেই গর্ভবতীর গ্যাসের ঔষধ এর নাম সমূহ জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন।
এবং কোন ধরনের ঔষধ গর্ভবতী মায়ের জন্য নিরাপদ সে সম্পর্কে জানতে চান। আজকে আমরা গর্ভবতী গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ এর তালিকা সহ বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – গর্ভের সন্তান ফর্সা হওয়ার আমল
গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কেন হয়
গর্ভাবস্থায় প্রতি মাসে এক ধরনের গ্যাস এর সমস্যা দেখা যায়। প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদেরই কম বেশি হয়ে থাকে। গর্ভ অবস্থায় শুরু থেকে শরীরে হরমোনের ক্ষরণ খুবই বেড়ে যায়। যার কারনে পাকস্থলী থেকে খাবার নিচে নামতে সময় লাগে। ফলে পেট একটু ফেঁপে থাকে।
তার সঙ্গে প্রথমবার প্রেগনেন্সিতে আরও বেশি গ্যাসের সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক সময় হয়ে থাকে। দুই এক দিন ঠিকভাবে পেট পরিষ্কার না হলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর প্রেগনেন্সি সময় যত বাড়তে থাকে পেটও তত বড় হতে থাকে।
পাকস্থলীর উপর চাপও তত বেশি পড়ে তাই গ্যাসের সমস্যা আরো বেশি বেড়ে যায়। এ সময় বেশি খাওয়া দাওয়া করলে শুয়ে বসে থাকলে এটি বেশি অস্বস্তের কারণ হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস হওয়ার লক্ষণ
সাধারণত গর্ভাবস্থায় অন্য যেকোনো সময় পেটে গ্যাস হবার লক্ষণগুলো হলো-
- পেট ফোলা ভাব
- বমি বমি ভাব
- বুক জ্বলা করা
- পেটে অসুস্থ অনুভব করা
- খাবার হজম না হওয়া
- বদহজম হওয়া
- ডায়রিয়ার মত পায়খানা হওয়া
- পায়খানা ক্লিয়ার ভাবে না হওয়া
- বমি হওয়া
- গলা জলা
গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধের তালিকা
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের ঔষধ পাওয়া যায়। তবে সব ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবন করা নিরাপদ নয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু গ্যাসের ঔষধ রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিতে ঔষধ গুলোই গর্ভবতী মায়েদের জন্য সেফ বলে জানান ডাক্তাররা। নিচে গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধের তালিকা বর্ণনা করা হলো-
- প্যান্টনিক্স
- Losectil
- Esomeprazole
- Maxpro
- Seclo
- Sergel
- Kosec
- Rabeprazole
- Lansoprazol
- Rajniti dine
গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধের দাম
গর্ভবতী মায়ের এই সময় পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে গ্যাস হতে পারে। তাই বাজারে যেসব গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধের দাম সর্বনিম্ন ৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ টাকা হতে পারে। তবে কিছু কিছু গ্যাসের ওষুধের দাম আরো বেশি হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের ওষুধ কখন খাওয়া উচিত
সাধারণ প্রেগন্যান্সিতে গ্যাসের ঔষধ বা অন্য যেকোনো সময় গ্যাসের সাথে খাওয়ার নিয়ম হলো খাওয়ার ২০ মিনিট আগে গ্যাসের ঔষধ সেবন করা। এতে করে দেশের সমস্যা কম হয় এবং গ্যাসের ওষুধ খার ২০ মিনিট পর অবশ্যই খাবার গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় আয়রন ক্যালসিয়াম ফলিক এসিড সহ বিভিন্ন ভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়।
এতে করে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই আয়রন ক্যালসিয়াম ঝিংক বা ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর সাথে গ্যাসের ট্যাবলেট খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের ওষুধ খাওয়া কতটা নিরাপদ
গর্ভাবস্থায় গ্যাসের ওষুধ খাওয়া কতটা নিরাপদ তা অনেকেই জানেন না। সাধারণত গর্ভাবস্থা সব ধরনের ওষুধ সেবন করা যায় না তবে যেহেতু গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের গ্যাসে সমস্যা হয় তাই চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট সেবন করার জন্য পরামর্শ দেন।
এতে করে গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে গ্যাসের ওষুধ দিনে কয়টা খাওয়া যাবে বা কোন ধরনের গ্যাসের ওষুধ আপনার জন্য নিরাপদ সঠিকভাবে আপনার রেজিস্টার চিকিৎসকই পরামর্শ দেবেন।
গর্ভবতী মায়ের গ্যাস হলে করণীয়
গর্ভবতীর গ্যাসের ঔষধ এর নাম জানলেও এ সময় যথাসম্ভব কম ঔষধ গর্ভবতী মায়েদের গ্রহণ করা উচিত। কেননা এর সাথে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে এবং নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই চেষ্টা করতে হবে খুব বেশি গ্যাসের সমস্যা না হলে ঔষধ সেবন করা যাবে না।
ঘরোয়া ভাবে গর্ভবতী মায়ের গ্যাস উপশম করার চেষ্টা করতে হবে। গর্ভবতী মায়ের গ্যাস হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
- অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ঝাল মসলা খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে
- বাইরের ফাস্টফুড বা অস্বাস্থ্যকর খাওয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখতে হবে
- ওষুধ হিসেবে এন্টাসিড তরল বা ট্যাবলেট আকারে বাজারে পাওয়া যায় তা সেবন করতে হবে
- গ্যাসের অন্যান্য ঔষধ খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস দূর করতে পরিমিত পানি পান করতে হবে
- প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত
- বেশি বেশি ফাইবার বা আশযুক্ত খাবার খেতে হবে
- অনেকেরই নির্দিষ্ট কিছু খাবারে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- পেটে বাতাস ঢোকা কমাতে ধীরেস্থে খেতে হবে
- একেবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত
- দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে
- প্রতিদিন হালকা কিছু ব্যায়াম করে শরীর সুস্থ রাখতে হবে
গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে করনীয়
নিচে এমন কিছু টিপস দেয়া হল যেগুলো মেনে চললে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের পেটে গ্যাস জমবে না।
- যেমন কিছু শাকসবজি রয়েছে যেমন ফুলকপি পাতাকপি ব্রকলি সুগার এগুলো একেবারেই কম গ্রহণ করতে হবে।
- যেসব ফল বা খাবার উচ্চ পরিমানে ফ্রুটস থাকে যেমন মধু ড্রাইভোর্স, ক্যান টমেটো, ক্যাছাপ আপেল আতা ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন গমের তৈরি খাবার ওটস ব্রান্ড সিম মটরদানা খাবার গুলো সাধারণত গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে
- অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে রুটির পরিবর্তে মুড়ি খাওয়া উচিত
- যেসব খাবারে অতিরিক্ত তেল থাকে সেসব খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয় তাই সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- দুধ খেলে যাদের গ্যাসের সমস্যা হয় তারা ল্যাকটোজ ফ্রি মিল্ক খাবেন
- পানি পান করার সময় দাড়ি বা বোতলে পানি পান করবেন না ভালোভাবে মগে বা গ্লাসে বসে পানি পান করুন
- বেশি বেশি লিকুইড জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং আট থেকে দশ গ্লাস লিকুইড পানি পান করতে হবে
- খাবার গ্রহণ করার মাঝে পানি পান না করে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং ৩০ মিনিট পর পানি পান করতে হবে
- খাওয়ার সময় একেবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে
- খাবার খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে এবং খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন
- বড় মিলগুলো অন্তত ২0 মিনিট ধরে খেতে হবে
- খাবার খাওয়ার সময় অন্য কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করা যাবে না
- খাওয়ার প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিন
- কৃত্রিম চিনি বা চর্বি দিয়ে তৈরি যে কোন খাবার পরিহার করুন
- handic হার্ড ক্যানসিলানোর অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করুন
- গর্ভধারণের আগে থেকে যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তবে চিকিৎসকে পরামর্শ নিন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন
- প্রতিদিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করুন
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট ইয়োগা করা উচিত
- গর্ভকালীন তিন থেকে চারটি কাঁচা আমলকি লবণ ছাড়া খেতে পারেন
- খাবার এর সাথে এক চা চামচ কিছুটা মৌরি দানা বা মিষ্টি জিরা চিবিয়ে খেতে পারেন
গর্ভাবস্থায় কোন গ্যাসের ওষুধ খাওয়া সবচেয়ে বেশি নিরাপদ
সাধারণত গর্ভাবস্থার গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ হিসেবে সব গ্রুপের ঔষধ খাওয়া যায় না। এতে করে মা এবং শিশুর সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা হয় এমন কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং ঘরোয়া ভাবেই গ্যাসের সমস্যা কমানোর চেষ্টা করা। তবে যদি কোন কারণে খুব বেশি গ্যাসের সমস্যা হয় তাহলে অ্যান্টাসিড বা ক্যালসিয়াম গ্রুপের অ্যান্টাসিড খাওয়া উচিত।
লিকুইড বা টেবলেট জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় প্যানটোনিক্স এবং অ্যান্টাসিড খাওয়া সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
সতর্কতা
জেনে রাখতে হবে যে ওমিপ্রাজল গ্রুপের যেকোন গ্যাসের ওষুধ গর্ভবতী মায়েরা কখনো গ্রহণ করবেন না। এতে করে আপনার এবং সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। গর্ব অবস্থায় গ্যাস হলে প্যানটোপ্রাজল যেমন নেক্সন ইসোনিক্স ইসোরাল প্যান্টোনিক্স ইত্যাদি খেতে পারেন।
এছাড়া আপনার চিকিৎসক আপনাকে যে গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিবেন নিয়মিত সেটির সেবন করতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত গর্ভবতী মায়ের জন্য গ্যাসের ঔষধ বা কোন ঔষধই সেবন করা উচিত নয়।
গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ
আজকে আমরা গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ এর তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ড এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –