খুশখুশে কাশির সিরাপ ও ঘরোয়া সমাধান

খুশখুশে কাশির সিরাপ

খুশখুশে কাশি খুবই বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। এটি কোন কঠিন রোগ নয়। কাশি শুরু হবার প্রথম থেকে কোন ঔষধ সেবন করলে বা ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা করলে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়না। কমবেশি সবারই কাশির সিরাপ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক খুশখুশে কাশি হলে কী করবেন এবং খুশখুশে কাশির সিরাপের নাম সহ সহজ কিছু ঘরোয়া উপায়।

খুশখুশে কাশি

দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত শুষ্ক কাশি থাকলে এবং কাশির সাথে কোন কফ না বের হলে সেটাকে খুশখুশে কাশি বলে। শীত-গরম আসার আগের সময়টাতে আবহাওয়া বদলে যাওয়ার কারণে সাধারণত খুশখুশে কাশি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষই এই রোগেআক্রান্ত হতে পারে।

খুশখুশে কাশির সাথে কফ বা শ্লেষ্মা বের হয় না এবং কারো কারো ক্ষেত্রে কাশির সাথে রক্ত যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতের বেলা খুশখুশে কাশির সমস্যা বেড়ে যায়। যার ফলে ঘুমের সমস্যা হয়।

খুশখুশে কাশির কারণ

খুশখুশে বা শুষ্ক কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে । যেমন যদি কারো নাক বা গলায় এলার্জির সমস্যা থাকে, হাঁপানির শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে অথবা ঠান্ডাজনিত ভাইরাস সংক্রমণ থাকে। অতিরিক্ত ধূমপান, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা অথবা বিভিন্ন রকমের ঔষধ সেবনের ফলে ও খুশখুশে কাশি হতে পারে।

বেশিরভাগ সময়ই এই কাশি সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের দরকার হয় না। তবে অনেক সময় ফুসফুসের সংক্রমণ নিউমোনিয়া বা যক্ষার কারনেও খুশখুশে কাশির সমস্যা হয়ে থাকে। তাই খুশখুশে কাশির প্রকৃত কারণ খুঁজে এর চিকিৎসা করলে সহজে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

বাচ্চাদের খুশখুশে কাশি হলে করণীয়

সাধারণত বাচ্চাদের কোন অসুখ হলে সহজে কমতে চায়না। বাচ্চাদের খুশখুশে কাশি ভালো করতে হলে গরম দুধের সাথে অল্প হলুদ মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। আশাকরি কাশি থেকে স্বস্তি মিলবে। তবে কাশি হলে বাচ্চাদের বেশি বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হয়।

তবে বাচ্চার বয়স যদি ছয় মাসের কম হয় তাহলে নবজাতকের বুকে গরম সেঁক দেওয়া, একটু উচু বালিশে শোয়ানো, সরিষার তেল সরিষার তেল ও রসুন হালকা গরম করে বুকে মাসাজ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তার পাশাপাশি নবজাতকের মা মধু লেবু গরম পানি সহ আদা চা সেবন করতে পারেন। এতে করে নবজাতকের কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।

তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খুশখুশে কাশির সিরাপ নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার ক্রিম – বাচ্চাদের স্কিন কেয়ার

খুশখুশে কাশির ঘরোয়া সমাধান

খুশখুশে কাশি সারানোর জন্য যেসব ঘরোয়া উপাদান সবসময় আমাদের হাতের নাগালে থাকে কিভাবে সেসব দিয়ে খুশখুশে কাশি থেকে মুক্তি লাভ করা যায় আজকে আপনাদের সেসব সম্পর্কে কিছু ধারনা দেবো।

হলুদ – ঘরোয়া এমন অনেক উপাদান আছে যেগুলো ওষুধের মতো কাজ করে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হলুদ। বিভিন্নভাবে কাশির জন্য উপকারী। যেমন গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় অথবা গরম পানির সাথে হলুদ এবং গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে কাশি অনেক কমে যায়।

গরম পানি – সাধারণ সর্দি কাশি হলে ঠান্ডা পানি খাওয়া অথবা ঠান্ডা পানি ধরা থেকে বিরত থাকা উচিত। গরম পানির সাথে লবণ অথবা লেবু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

মধু – শুধুমাত্র খুশখুশে কাশির জন্য নয় মধু অনেক রোগের জন্য উপকারী যারা নিয়মিত মধু সেবন করেন তারা প্রতিদিন ছোটখাটো রোগ থেকে সবসময় দূরে থাকেন। মধু এবং কালোজিরা শুষ্ক কাশি থেকে আপনাকে দূরে রাখবে। একটা চামচ মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে গরম পানির সাথে খেলে অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

তুলসী পাতা – আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী তুলসী পাতা তাদের মধ্যে অন্যতম। তুলসী পাতার রস,তুলসী পাতার চা,মধুর সাথেও তুলসী পাতা খাওয়া যায়। খুশখুশে কাশির সিরাপ থেকেও তাড়াতাড়ি কাজ করে।

বাসক পাতা – বাসক পাতা শহরে পাওয়া না গেলেও গ্রামের অনেকের বাড়িতেই পাওয়া যায়। যা খুশখুশে কাশির সিরাপ মতো কাজ করে।

রঙ চা- রঙ চা সর্দি কাশি সহ বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারি। চা এর সাথে মধু, আদা,লবঙ্গ,লেবু, তুলসি পাতা মিশিয়ে খেলে খুশখুশে কাশির সিরাপ এর প্রয়োজন হয় না।

আদা- আদার রস গলা পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। সেজন্য খুশখুশে কাশিতে আক্রান্ত হলে দিনে 2 বার এক চামচ আদার রস খেলে খুশখুশে কাশির ঔষধ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

কাশির জন্য হারবাল বা ইউনানী ঔষধ

অনেক আগে যখন এলোপ্যাথি ছিল না তখন মানুষের সব ধরনের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি হারবাল ইউনানী পদ্ধতিতে করা হতো। এলোপ্যাথি রিএকশন থাকলেও বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছের তৈরি ঔষধ ব্যবহার করলে তার কোনো রিয়্যাকশন হয় না। আজকে আমরা কিছু হারবাল ঔষধের নাম বলব যা আপনাদের আশা করি উপকারে আসবে।

ইউনানী ঔষধ এর জন্য হামদর্দ কোম্পানির ঔষধ খুবই জনপ্রিয় তবে বাজারে আরো বিভিন্ন কম্পানির ঔষধ পাওয়া যায়।

এল্ভাসিন-শুকনো কাশি বা খুশখুশে কাশি, অথবা নাক বন্ধ হয়ে গেলে, ফুসফুসের সমস্যার জন্য খাওয়া যেতে পারে।

 সেবনবিধিঃ প্রাপ্তবয়স্কঃ ২ থেকে ৫ চা চামচ। অপ্রাপ্তবয়স্কঃ এক থেকে দু চা-চামচ দৈনিক ২ বার।

সাধুরিঃ এটি সাধরনত খুশখুশে কাশির জন্য,ফুস্ফুসের আবদ্ধতা,ভাইরাস জনিত সর্দি-কাশি,হাপানির জন্য বহুল জনপ্রিয়।

ব্যবহারবিধিঃ প্রাপ্তবয়স্কঃ 2 চা চামচ অপ্রাপ্তবয়স্কঃ  আধা চামচ থেকে এক চামচ দৈনিক দুই থেকে তিনবার

জোশিনা চা – এটি হারবাল জাতীয় এক বিশেষ ধরনের চা। নিয়মিত এই চা পানে খুশখুশে কাশি হয় না এছাড়া গলা পরিষ্কার থাকে।

খুশখুশে কাশির সিরাপের নাম

খুশখুশে কাশির সিরাপ বয়স বয়সের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। রোগীর বয়স ও কন্ডিশন অনুযায়ী ডাক্তার বিভিন্ন বিভিন্ন শ্রীরাম সাজেস্ট করে থকেন। এই পর্যায়ে আমরা বহুল ব্যবহৃত কিছু সিরাপের নাম ও ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

বড়দের সিরাপ

সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। তবে সর্দি-কাশি খুশখুশে কাশি যেহেতু কমন রোগ তাই এর কিছু সিরাপের নাম মোটামুটি সবারই জানা আছে। যেমনঃ Devas,Adovas,Dexpoten plus,Ofcof,Tusca, এমবোলিট, এমব্রোক্স ,বক্সল,বাসক,কুলজম,ফেভনিল,আসদা।

ছোটদের সিরাপ

বাচ্চাদের সর্দি কাশি লেগেই থাকে। সহজে সারে না বলে খুশখুশে কাশি প্রায় লক্ষ্য করা যায়। বাচ্চাদের ভালো কিছু খুশখুশে কাশির সিরাপ হল এমব্রোক্স ,প্রসমা, পিউরিসাল,ডেক্সপোটেণ প্লাস, দেভাস।

শীতে খুশখুশে কাশি থেকে বাচার উপায়

যেহেতু শীত এবং গরমের পূর্বেইখুশখুশে কাশি শুরু হয় তাই শীতের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সকালে প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাক, ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, মোটা কাপড় পরা উচিত। ঠান্ডা খাবার খাওয়া মোটেও উচিত নয়।

কোন কোম্পানির কাশির সিরাপ ভালো

যদিও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির খুশখুশে কাশির সিরাপ পাওয়া যায়।আজকাল আসল ঔষধের পাশাপাশি বাজারে অনেক ধরনের নকল ঔষধ বিক্রি করা হয়। কিন্তু কিছু কোম্পানি ঔষধ মানুষ বেশি ব্যবহার করে। স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইবনে সিনা, এসিয়াই।

খুশখুশে কাশির সিরাপ

মন্তব্য

উপরে আমরা খুশখুশে কাশির সিরাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লেগেছে। ভালো লাগলে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply