ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায়
বিভিন্ন কারণে আমাদের ক্ষুধামন্দা রোগ দেখা দেয়। অনেক সময় আমরা মুখে রুচি কমে যাওয়ার ফলে খেতে পারি না। এতে করে আমাদের স্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি হয় শরীরও খারাপ হয়। তাই ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায় এবং ক্ষুধামন্দা দূর করার ঔষধ সম্পর্কে অনেকে জানতে চান।
আজকে আমরা ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায় এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
ক্ষুধামন্দা কি?
ক্ষুধামন্দা হলো রুচি কমে যাওয়া। এটাকে অনেকে ক্ষুধা মন্দা বা অ্যানোরেক্সিয়া বলে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে রুচি কম থাকলে সেটি বিভিন্ন ধরনের জটিল বা গুরুতর অসুখ হতে পারে। বিভিন্ন রোগের কারণেও অনেক সময় ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় অথবা মানসিক চাপেরও কারণ হতে পারে।
ক্ষুধামন্দার লক্ষণ
ক্ষুধামন্দা বা মুখে রুচি কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো হল-
- খিদে না পাওয়া
- খেতে ইচ্ছে না করা
- পেট ভরা ভরা লাগা
- বমি বমি ভাব হওয়া
- হজমের সমস্যা হওয়া
- খাবারের প্রতি অনীহা
- কোন কিছুই ভালো না লাগা
- জোর করে খেলে বমি হওয়া
- মাথা ঘোরা
- ওজন কমে যাওয়া
ক্ষুধামন্দার প্রধান কারণ
বিভিন্ন অসুস্থতা জনিত কারণে সাধারণত আমাদের শরীরে খিদে না থাকার সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে আমাদের ক্ষুধা মন্দার সমস্যা তৈরি হয়। কারণগুলো হলো-
- মাইগ্রেনের সমস্যা
- স্নায়ুর ক্ষতি
- অস্ত্রোপাচারের পর ব্যথা
- ক্লান্তি
- গর্ভাবস্থা
- হৃদপিণ্ড জনিত সমস্যা
- এটি প্রস্রাবের ইনফেকশনের পূর্বের লক্ষণ
- সর্দি
- হঠাৎ করে ধূমপান বা মাদক ছেড়ে দিলে
- নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রা হিসেবে
- মানসিকভাবে টেনশনে থাকলে
- অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে
- অ্যানার অক্সিয়া নার্ভস অথবা বলি মিয়ার ফলে
- অনিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন
- জ্বর
- কৃমি
- ফুড পয়জনিং
- পাকস্থলীতে প্রদাহ
- এন্টিবায়োটিকের ঔষধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- অতিরিক্ত ধূমপান
- দুশ্চিন্তা
- বিষণ্ণতা
- মানসিক সমস্যা
- হেপাটাইটিস সমস্যা
- ক্রনিক কিডনি সমস্যা
- ভিটামিন বি ১২ এর অভাব হলে
- গর্ভাবস্থা
- জন্মনিরোধক বড়ি ব্যবহার করলে
- এসিড রিফ্লাক্স ডিজিজ হলে
ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায়
নিচে ঘরোয়া ভাবে ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায় বর্ণনা করা হলো-
মৌরি- মৌরি আমাদের পিত্তরস উৎপাদন এবং নিঃসরণে অনেক সহায়তা করে। ফলে হজম প্রক্রিয়ার সক্রিয় হয় এবং খাবার চাহিদা ও বৃদ্ধি পায়। এক চা চামচ মৌরি অথবা আধা চা চামচ মেথি দুই থেকে তিন কাপ পানির সঙ্গে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ছেকে এক থেকে দুইবার দিনে খেলে অরুচি সমস্যা কমে যায়।
যোগব্যায়াম– প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট শরীর চর্চা করলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়। তবে যোগ ব্যায়াম শুরু করবার আগে ভালোভাবে শিখে নিতে হবে যে যোগব্যায়াম কিভাবে করে বা খিদের জন্য যোগব্যায়াম কিভাবে করতে হয়।
আদা- আদা আদা প্রাকৃতিক ভাবে হজম এর সময় তৈরি হওয়া গায়ে গ্যাস দূর করতে অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আদা গলা পরিষ্কার সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
ফল এবং সবজি- আপেল পেয়ারা কমল আঙ্গ ইত্যাদি ফল খুদা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও টমেটো ধনিয়া পাতা খিদা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের ফল এবং সবজি আমাদের হজম সহায়ক রস তৈরিতে অনেক বেশি উপকারী। তাই নিয়মিত খাবার তালিকা এসব ফল এবং সবজি রাখতে হবে।
কয়েক বেলা খাবার খাওয়া- সাধারণত তিন বেলা ভারি খাবার খাওয়া হয় কিন্তু যাদের অরুচি আছে তারা তিন বেলা প্রধান খাবারকে পাঁচ থেকে ছয়টি ভাগে ভাগ করতে পারেন। এতে করে বারবার খেলে খাবারের রুচি বাড়তে পারে।
খাবারে ক্যালরি যোগ করা- খাবারের স্বাদ মুখে অন্তত একটা ক্যালরি যোগ করতে পারে। যেমন মাখন দিয়ে ডিম ভাজি বা পানির পরিবর্তে দুধ দিয়ে ওটমিল রান্না করতে পারেন। সালাদের জলপাই এর তেল যোগ করতে পারেন।
ভেষজ মসলা- মসলা বা ফল আরো আকর্ষণীয় করে হজমে সহায়তা করে পেটফাপা কমিয়ে খোদা বাড়িয়ে দেয়। এজন্য মৌরি হরতকি পুদিনা কালো মরিচ ধনে আদা দারচিনি আমলকি মাল্টা ইত্যাদি খেতে পারেন।
পানি সঠিক সময় খাওয়া- খাবার খাওয়ার সময় বা কিছুক্ষণ আগে চা পানি ইত্যাদি যে কোন ধরনের পানীয় গ্রহণ করা উচিত না। কারণ খাবার খাওয়ার আগে এবং খাবার খাওয়ার সময় পানি বেশি খেলে পেট ভরে যায়। তাই এ কারণে খাবার সময় খাবার রুচি নষ্ট হয়ে যায়।
অনুমিত খাদ্যাভ্যাস- অনিয়মিত খাবার গ্রহন স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভ্যাসের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা ঘুমাতে যাওয়া খাওয়ার সময় ব্যায়াম পর্যাপ্ত পানি পানি ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ম পালন করতে হবে।
ক্ষুধামন্দার চিকিৎসা
চিকিৎসকরা সাধারণত কি কারনে ক্ষুধা মন্দা তৈরি হয়েছে সেই কারণ নির্ণয় করার পরে ক্ষুধামন্দা দূর করার পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। এছাড়াও থাইরয়েডের সমস্যায় যাই ভি ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। খুদা মন্দা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসকরা ওষুধ থেরাপি বেদনাশক বা বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়াভাবে ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন।
ব্যায়াম বিশ্রাম যথাযথ খাবার গ্রহণ করা কাউন্সিলিং ইত্যাদি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও ক্ষুধাবর্ধকের জন্য খাবারের স্বাদ পরিবর্তন বা বিভিন্ন ধরনের রুচি বৃদ্ধির ঔষধ দিতে পারেন।
ক্ষুধা মন্দা দূর করতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
বিভিন্ন ধরনের খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুধা মন্দা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো-
- চকলেট বা চিনি জাতীয় খাবার
- তেল
- মশলা জাতীয় খাবার
- বাইরের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার
- কোমল পানীয়
- নাস্তা জাতীয় জিনিস
- অতিরিক্ত তেল জাতীয় জিনিস
রুচি বাড়ানোর খাবার
রুচি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খাবার প্রভাব বিস্তার করে। যেমন-
- কাঁচা আমলকি
- শুকনা আমলকির গুড়া পানিতে মিশিয়ে খাওয়া
- আদা কুচি
- বা আদার রস
- পুদিনা পাতার রস
- এলাচির গুড়া
- চিনি দিয়ে লেবু খাওয়া
- ডালিমের রস
- কমলা বা মাল্টা খাওয়া
- লেবু
- ব্রোকলি
- টমেটো
- ধনেপাতা
রুচি বৃদ্ধি করার ঔষধ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রুচি বৃদ্ধি করার ঔষধ পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো-
- সিনকারা
- সাফি
- অমিডন
- ভিটামিন সিরাপ
- ভীকড সিরাপ
- মেজে স্টাইল সিরাপ
- এলকুচি সিরাপ
- হামদর্দ সিনকারা সিরাপ
বাচ্চাদের রুচি বৃদ্ধি করার ঔষধ
বাচ্চাদের রুচি বৃদ্ধি করা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের রুচি কমে যায় যেমন কৃমি সর্দি কাশি সহ অন্যান্য রোগ তবে বাজারে বাচ্চাদের মধ্যে অন্যতম হলো-
- ওমিডন
- জিংক
- জিংক বি
- বিকোজিন
রুচি বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে সতর্কতা
অনেক সময় রুচি বাড়ার জন্য বিভিন্ন ওষুধ আমরা সেবন করে থাকি। তবে এসব ঔষধ সেবন করার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা কিডনির সমস্যা অতিরিক্ত ওজন ওজন বৃদ্ধির ঔষধের ফলে বেড়ে যায়।
যার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওজন বৃদ্ধি বৃদ্ধির ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায়
আজকে আমরা ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে।আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- মোটা হওয়ার ভিটামিন সিরাপ ও ক্যাপসুল
- স্থায়ীভাবে মোটা হওয়ার ইসলামিক উপায় | মোটা হওয়ার প্রাকৃতিক ও কার্যকরি খাবার
- আমি চিকন হবো কিভাবে, চিকন হওয়ার উপায় কি