কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই কিডনি সুস্থ রাখা আমাদের সবার উচিত কেননা কিডনি রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
আজকে আমরা কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় এবং কিডনির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে লাগবে।
কিডনি কি?
কিডনি শব্দটি ইংরেজি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অন্ত্রের প্রধান অংশ হিসেবে পরিচিত। কিডনি প্রধান কাজ হল রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ যেমন ইউরিয়া পৃথকীকরণ এবং মূত্র উৎপাদন করা। মানবদেহের সব রক্ত দিনে প্রায় ৪0 বার বৃক্কের মধ্য দিয়ে কিডনি প্রবাহিত করে।
কিডনি কি কাজ করে?
কিডনি মানবদেহের মূল অঙ্গ গুলোর একটি অঙ্গ। সুস্থ দেহের জন্য এবং বেঁচে থাকার জন্য এই কিডনি থাকা অপরিহার্য। কিডনি প্রধানত রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ অতিরিক্ত পানি এবং অন্যান্য অতিরিক্ত ক্ষতিকারক পদার্থ শোধন করে দেয়। রক্তের পটাশিয়াল অফ হাইড্রোজেন ব্যালেন্স অর্থাৎ পি এইচ বজায় রাখতে পালন করে যা আমাদের সুস্থ থাকার জন্য খুবই জরুরী।
এছাড়া কিডনির অন্যতম প্রধান কাজ হলো লবণ এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। হরমোন তৈরি করে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা লাল রক্ত কোষের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যালসিয়াম শোষণের সহায়তা করা।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
বিভিন্ন টেস্ট বা পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি সুস্থতার পরিমাপ সম্পর্কে জানা যায়। নিচে কিডনি সুস্থতার টেস্টগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো-
প্রস্রাবের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা- প্রস্রাবের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা করা জরুরী। প্রস্রাবে আমিষ বা অ্যালবামে নির্গত হওয়ার কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ বলে জানান চিকিৎসকরা। অনেক সময় এর পরিমাণ এত কম হয় যে সাধারণ রুটিন প্রস্রাব পরীক্ষা ধরা পড়ে না।
তখন মাইক্রো এলবুমিন টেস্ট করতে হয়। আবার প্রয়োজন হলে চিকিৎসকরা ২৪ ঘন্টা প্রস্রাবে আমিষের পরিমাণ পরীক্ষা করতে পারেন।
ইউরিয়া ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা- কিডনি সক্ষমতা জানার জন্য রক্তে ইউরিয়া এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা হয়। কিডনি অসুস্থ কিডনিতে এই দুটি পরিমাণ বেড়ে যায়।
জিএফ আর গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট- এর মাধ্যমে কিডনি কতখানি আক্রান্ত বা সুস্থতা সবচেয়ে ভালো বোঝার উপায় হলো এটি। জিএফ আর ৯০ এর উপরে হলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আর ১৫ নিচে থাকলে বুঝতে হবে কিডনি শেষের পর্যায়ে রয়েছে।
আল্ট্রা সাউন্ড- কিডনির আকার সিস্ট টিউমার পাথর মুত্রতন্ত্র প্রটেস্টের অবস্থা বুঝতে এই আল্ট্রাস সাউন্ড একটি কার্যকর পরীক্ষা।
হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোলাইট- ক্যালসিয়াম ফসফেট ভিটামিন ইত্যাদি পরীক্ষা করার মাধ্যমিক জটিলতা দেখতে রক্তের পরীক্ষা করা দরকার। যে কোন মানুষেরই নিয়মিত শর্করা এবং রক্তচাপ মাপা উচিত।
কিডনি রোগের লক্ষণ
শরীরে কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা বোঝার জন্য অনেক টেস্ট করতে হয়। তবে কিডনি রোগ হয়েছে কিনা তার অনেকগুলো লক্ষণ আছে। সেগুলো দেখাই দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিচে কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো-
পিঠের নিচের দিকে ব্যথা- বিশেষজ্ঞরা বলেন যদি কিডনি রোগ শরীরে বাসা বাঁধে তবে পিঠে ব্যথা করা শুরু করবে। ওপর দিক থেকে ব্যথা হবে না বেশিরভাগ সময় পিঠের নিচের অংশে ব্যথা দেখা যাবে। তাকে সাধারন ব্যথা মনে না করে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রস্রাবে সমস্যা- কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জন নির্গত করে। কিন্তু কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে মূত্রনালীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। যেমন বারবার প্রস্রাব করা মূত্রের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া মাত্র অতিরিক্ত ফেনা হওয়া কিডনি সমস্যার অন্যতম লক্ষণ।
ত্বকে রেশ হওয়া- কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ত্বকে রেশ হবে। বিশেষজ্ঞের মতো কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে রক্ত পরিশোধ হয় না। এতে করে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের রেস দেখা যায়।
শীত অনুভূত হোক- অনেক নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সবসময় ক্লান্তি দূর্বল অনুভব হওয়া ওজন কমে যাওয়া কিডনি সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে কিডনি ঠিকমত কাজ না করলে রক্তে বিষাক্ত এবং অপ্রয়োজনে উপাদান বাড়তে থাকে। যা ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা অনুভূত করে যার ফলে শীত অনুভূত হয়।
ফোলা ভাব এবং শ্বাসকষ্ট- কিডনির সমস্যা দেখা দিলে মুখ থেকে শুরু করে হাত পা ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়। চোখের চারপাশ পায়ের গোড়ালে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। এছাড়াও কিডনির সমস্যা হলে ফুসফুসে তরল জমা হবে এর ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
মুখে দুর্গন্ধ- বিভিন্ন বড় বড় কিডনি রোগ চিকিৎসকদের মতানুসারে কিডনি রোগ হলে মুখে দুর্গন্ধ বেশি হয়। তাই মুখে দুর্গন্ধ হলে বুঝতে হবে কিডনিতে সমস্যা হয়েছে।
প্রস্রাব লাল হওয়া- ঘনঘন প্রস্রাব প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া প্রস্রাব লাল হওয়া ইত্যাদি কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ। তাছাড়া কোমরের দুই পাশে তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা কিডনি রোগের লক্ষণ।
কিডনি রোগের কারণ
বিভিন্ন কারণে আমাদের কিডনি রোগ হয়। যেমন-
- গবেষণায় জানা যায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কিডনি রোগ নিফ্রাইটিসের কারণে হয়
- এবং ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ডায়াবেটিসের কারণে তাছাড়া
- ১০ থেকে ২০% কিডনি বিকল হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে
- এছাড়াও বংশগত কারণ
- ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাল সংক্রমন
- কিডনিতে পাথর হলে
- অস্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং বিভিন্ন ধরনের ঔষধের প্রভাবে
- কিডনি রোগ হয়
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে ও কিডনি রোগ হয়
- হার্ট এবং মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাত
- হঠাৎ কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া
- অন্যান্য সংক্রমণ রোগের কারণেও কিডনি রোগ হতে পারে
- ধূমপান করা বা
- ৬০+ বয়সী ব্যক্তিদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
কিডনি রোগের চিকিৎসা
প্রধানত কিডনি রোগের চিকিৎসা হলো আপনার জীবন ধারার পরিবর্তন। আপনাকে সুস্থ থাকতে এই জীবনধারা পরিবর্তন সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব হয়। তাছাড়া ওষধ উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মত সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকরা সাধারণত প্রথমে রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর রক্তের ইউরিয়া ক্রিয়েটেনিং এবং ইলেকট্রোলাইটস পরীক্ষা করে থাকেন। যদি রোগীর ডায়রিয়া বাবু এর জন্য একটিউট কিডনি রোগ হয় তাহলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তখন স্যালাইন এবং পটাশিয়াম দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
রক্তচাপ কম থাকলে স্বাভাবিক ব্যবস্থা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সঠিক সময়ে সনাক্ত না হওয়ার কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিস আরো বিভিন্ন খারাপের দিকে চলে যায়। কিডনি ফেলিয়ার দিকে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায় এক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মত ব্যয়বহুল চিকিৎসা নেওয়া লাগতে পারে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার জন্য করণীয় হল –
- ডায়াবেটিস এবং চরক্তচাপ থাকলে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- নিয়মিত প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে
- শারীরিক ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
- শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে
- ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করতে হবে
- খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন
- কোলেস্টেরলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুন
- প্রতিদিন বেশি পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
- কিডনি রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফলমূল খাওয়া যাবে না
- কিডনি রোগের কোন ঔষধ থাকলে অবশ্যই নিয়মিত খেতে হবে
- কিডনির সমস্যায় নিয়মিত রুটিন চেকআপ করাতে হবে
কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণ
কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষন হল-
- সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে হঠাৎ করে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
- রোগীর শরীর ফুলে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়া
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- বারবার বমি হওয়া
- খিচুনি হওয়া
- এছাড়াও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- আবারও অনেক সময় অন্ত্রের সমস্যা হওয়া
- ডায়রিয়া বা রক্তক্ষরণ থাকা
- জ্বর হওয়া
- জন্ডিস দেখা দেওয়া
- বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ
- নেফ্রাইটিসের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি রয়েছে
যাদের সবচাইতে কিডনি রোগের ঝুঁকি রয়েছে। তারা হলো-
- ডায়াবেটিস থাকলে
- উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
- হার্টের রোগে আক্রান্ত রোগী
- পরিবারে কারো কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলে
- ধূমপান করলে
- বয়স ৪০ এর বেশি হলে
- স্থূলতা বা অতিরিক্ত শরীরে ওজন থাকলে
- কোন অসুস্থতার কারণে দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ সেবন করলে
- আফ্রিকা আমেরিকান হিমবাহ এশিয়ান উচ্চ রক্তচাপের জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হলে
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
আজকে আমরা কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- কিডনি রোগের ঔষধের নাম, নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায়
- ক্ষুধামন্দা দূর করার উপায়,ঔষধ
- কেমোথেরাপি কি, কেমোথেরাপি দাম কত