কিডনি কত পয়েন্ট হলে ভালো?

কিডনি কত পয়েন্ট

আমাদের শরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। এই কিডনির যত্ন না নিলে খুব সহজেই কিডনির অনেক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। আজকে আমরা কিডনি কি এবং কিডনি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও জানা তথ্য সহ কিডনি কত পয়েন্ট হলে ভালো সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও কোন কোন খাবার কিডনির জন্য ভালো এবং কোন কোন খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর তা তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – BDTGame App Download and Earn ৳300000 Monthly

কিডনি কি?

বৃক্ক বা কিডনি মেরুদন্ডী প্রাণীদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা দেহের রেচনতন্ত্রের প্রধান অংশ। এই কিডনির প্রধান কাজ হল রক্তকে ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ যেমন ইউরিয়া পৃথকীকরণ ও মূত্র উৎপাদন করা। মানবদেহের সব রক্ত দিনে প্রায় ৪0 বার বৃক্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও দেহে পানি এবং তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বা ইলেকট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম পটাশিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখতে কিডনি সাহায্য করে।

এছাড়াও এটি অন্তক্ষরা গ্রন্থে হিসেবে হরমোন নিঃসরণ করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানব দেহের অভ্যন্তর ভাগে উদারগহ্বরের শেষ ভাগে মেরুদন্ডে দুই পাশে দুইটি বৃক্ষ অবস্থিত। বৃক্কের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি আকারে অনেকটা সিমের মত। রং খানিকটা লালচে বাদামী হয়। প্রতিটি বৃক্ষ স্বচ্ছ এবং পাতলা পেরিটোনিয়াম ঝিল্লি দ্বারা বৃদ্ধা থাকে। এর ভিতর দিয়ে ইউরেটার এবং রেনালসিরা বের হয় এবং রেনাল ধমনী ও স্নায়ুবিকে প্রবেশ করে যকৃতের অবস্থানের কারণে নিচে থাকে।

আরো পড়ুন – অনলাইনে  আয় করার সেরা উপায়

কিডনির কাজ

কিডনি প্রধান কাজ হল রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ আলাদা করে রক্তকে পরিষ্কার করা। এছাড়াও কিডনির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও দেহে পানি এবং তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের বা ইলেক্ট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম পটাশিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও কিডনির অনেকগুলো কাজ রয়েছে তাই যেসব কাজ করলে কিডনি সুস্থ থাকে সেসব কাজের মাধ্যমে কিডনিকে সুস্থ রাখার প্রয়োজন।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

শরীরের কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো GFR অথবা সিসিআর টেস্ট করা। এখানে জিএফ আর বলতে বোঝায় গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট অন্যদিকে CCR বলতে বোঝায় ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট। যদি আপনার এই টেস্টগুলোর জিএফআর ৯0 এর উপর হয়ে থাকে এবং যদি জিএফ আর ১৫ ই নিচে নেমে যায় তাহলে বুঝতে হবে কিডনি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এছাড়াও কিডনির অবস্থা বোঝার জন্য সিরাম ক্রিয়েটিনিং এবং রক্তে ইউরিয়া পরীক্ষা করা হয়। কিডনি রোগের যেকোন লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে প্রথম পর্যায়ে কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা জানার জন্য টেস্ট করানো উচিত। এছাড়াও ডায়াবেটিস বা উচ্চরা চাপের রোগীদের উচিত বছরে কমপক্ষে দুইবার এ সি আর এবং জি এফ আর এ দুটি সিম্পল ব্লাড টেস্ট করানো দরকার। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন থেকে জানানো হয়েছে এই দুটি টেস্ট করলে বোঝা যাবে আপনার শরীরের কিডনি কতটুকু সুস্থ আছে।

কিডনি রোগের লক্ষণ

শরীরে কিডনি অসুস্থ হলে বা যেকোনো রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে সেগুলো বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলো- খাদ্যে অরুচি

  • বমি বমি ভাব
  • পায়ে পানি আসা
  • মুখ ফুলে যাওয়া
  • সারা শরীরে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
  • শারীরিক শক্তি কমে যাওয়া
  • শরীরের রক্তের ছোপ ছোপ দাগ থাকা
  • পিঠে এবং কোমর অনেক ব্যথা হওয়া
  • মুখের মধ্যে শুভ্রতা দেখা
  • দেওয়া শরীরে বিভিন্ন স্থানের মাংসপেশিতে স্ক্রাপ হওয়া
  • শরীরে চুলকানি শুরু হওয়া
  • প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেওয়া
  • অথবা প্রস্রাবের সময় রক্ত আসা
  • পায়ের তলা ফুলে যাওয়া
  • ঠিক মত ঘুম না আসা
  • সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করা

কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি কত পয়েন্ট হলে ভালো তা জানার আগে কিডনি ভালো রাখার উপায় জানতে হবে। কিডনি ভালো রাখার সর্বোত্তম উপায় হলো-

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা- পানি যাতে বিশুদ্ধ হয় এবং ফুটানো হয় পরিষ্কার হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এক কথায় পরিষ্কার পানি পান করতে হবে। কার্বনেটেড এবং মদ পান করলে নিশ্চিতভাবে কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিদিন ৩ লিটার পানি পান করতে হবে।

ব্যায়াম করা- কিডনি সুস্থ রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। কিডনি ভালো রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটে ব্যায়াম করতে হবে সবচেয়ে ভালো হয় প্রফেশনাল লেভেলের বা কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যায়াম শিখে নেওয়া। তবে সাধারণত ব্যায়ামের জন্য বাইসাইকেল চালানো যেতে পারে অথবা প্রতিদিন দৌড়ানো যেতে পারে। এগুলো কোনটি সম্ভব না হলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে পারেন।

সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা- ধূমপান পান জর্দায় অ্যালকোহল ইত্যাদি খেলে কিডনি সমস্যার সমাধান হবে না বরং কিডনি খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। চিন্তা মুক্ত জীবন গড়ে তুলতে হবে অতিরিক্ত চাপ নেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমাতে হবে প্রতিদিন অন্তত কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে কিডনি সুস্থ থাকবে। অনিদ্রায় ভুগতে থাকবে কিডনির যেকোনো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন রকম ঔষধ খাওয়া যাবে না- বিভিন্ন ধরনের ঔষধ অন্য কোথাও ইফেক্ট না করলেও কিডনিতে ইফেক্ট করে থাকে। তাই কিডনি যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যাতে প্রাথমিক স্টেজ থেকে কিডনি সুস্থ করা যায়। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ডাকতে হবে এইসব রোগের ফলে কিডনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। যে কোন দীর্ঘস্থায় অসুস্থতার জন্য কিডনি রোগের জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে করে নিয়ে কি এবং সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এছাড়াও রোগীর পরিবার বা পরিচর্যা থাকতে হবে।

খাবার সময় ধীরে ধীরে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে- বেশি তাড়াহুড়া করা যাবে না চিনি এবং লবণ কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। লবণ কিডনি রোগ বাড়িয়ে দেয়। পাঁচ থেকে ছয় গ্রাম লবণ প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে। ভাজা জাতীয় লবণ খাওয়া যাবেনা বিশেষ করে যাদের কিডনি নিয়ে সমস্যা রয়েছে তারা বাহিরের খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

আরো পড়ুন – শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি ভালো রাখার ঔষধের নাম

কিডনি ভালো রাখার ওষুধ গুলো হল- বেলারডোনা, ক্যান্সারিস দিপিস, মেলেফিকা, আর্সেনিকাম, ওরাম মরিয়াটিকাম কোনালিয়া। কিডনি ভালো রাখার জন্য বাজারে এসব ঔষধ পাওয়া যায়। কিন্তু সুস্থ রাখার জন্য এই ওষুধগুলো খাওয়া যেতে পারে তবে ওষুধগুলো খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ নিতে হবে। কেননা কোন ধরনের ঔষধ নিজের শরীরের সাথে এডজাস্ট হবে তা শুধুমাত্র একজন রেজিস্টার চিকিৎসক বলতে পারবেন।

তবে বেলাডোনা কোমর ব্যথা বা কিডনির ব্যথার জন্য খুবই আদর্শ এবং নিরাপদ ঔষধ ।এবং এপিস মেলাপিকা ওষুধটি মাথাব্যথা প্রচন্ড ঘাম ঘাড়ে ব্যথা প্রস্রাবের সমস্যা চামড়ার সমস্যা ইত্যাদির জন্য কার্যকরী।

কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়

  • কিডনি ব্যথা দূর করার জন্য প্রচুর পানি খেতে হবে
  •  পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে
  • এছাড়াও গরম শেখ দিতে পারেন
  • চিকিৎসকে পরামর্শে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে
  • ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে
  • কিডনি ব্যথা সঠিক কারণ বের করার পর কিডনিতে পাথর হলে তাও অপারেশন করতে হবে
  • ইনফেকশন হলে অবশ্যই চিকিৎসার সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিতে হবে

কিডনি কত পয়েন্ট হলে ভালো

  • পুরুষের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিন ০.৭ থেকে ১.৪ এবং
  • নারীর শরীরে ক্রিয়েটিনিং এর স্বাভাবিক রেঞ্জ ০.৬ থেকে ১.২ এমজি ডি এল
  • একটি কিডনি যাদের নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ত্রুটির প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক
  • কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রতিটি ছেলেটার রক্তে রিটেনের মাত্রা ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম
  • শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিটেনিনের মাত্রা ০.৩ থেকে 0.৭ মিলিগ্রাম ডিএল
  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিন ৫.০ মিলিগ্রামের

এর চেয়ে বেশি হলে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে বুঝা যায়। আর যদি এর মধ্যেই কিডনির মাত্রা থাকে তখন বুঝতে হবে কিডনি সুস্থ এবং ভালো রয়েছে। যখন এই মাত্রাতে.৬ থেকে ১0 এম জিডি এল হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে কিডনির ক্ষমতা অনেক অংশে হ্রাস পেয়েছে। এই স্বাভাবিক রেঞ্জ রক্তে ক্রিয়েটিনিং টেস্ট করে বোঝা যায়। এই টেস্টের নাম ক্রিয়েটেনিং টেস্ট এটি এই মাত্রায় থাকলে বুঝতে হবে কিডনির সুস্থ রয়েছে।

কিডনি সুস্থ রাখতে যেসব খাবার খাওয়া উচিত

  • প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি
  • তাজা ফলমূল
  • বিশুদ্ধ পানি
  • চরবিহীন মাংস
  • তেল বিহীন মাছ
  • ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এক হাজার গ্রামের কম
  • ডাবের পানি
  • খেজুর
  • আলু
  • টমেটো
  • শসা
  • পালং শাক
  • ফলের রস
  • আপেল
  • পেয়ারা
  • নাশপাতি
  • জাম
  • তরমুজ
  • শাকসবজি সেদ্ধ করা পানি

যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা

  • বাইরের তেলেভাজা খাবার
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার
  • বাসি খাবার
  • ঠান্ডা পানিও
  • অতিরিক্ত লবণ
  • সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম
  • ২টেবিল চামচ এর বেশি ডাল
  • অতিরিক্ত গরু বা খাসির মাংস
  • অ্যালকোহল জাতীয় খাবার
  • ধূমপান
  • ফাস্টফুড জাতীয় খাবার

কিডনি কত পয়েন্ট

মন্তব্য

আজকে আমরা কিডনি কত পয়েন্ট হলে ভালো সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়লে কিডনির সম্পর্কে জানা ও অজানা অনেক তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন আপডেট সব নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply