ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
পেটের সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের জন্য ইসবগুলের ভুসি অন্যতম। ইসবগুল নিয়মিত সেবন করলে পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে বদহজম, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ইসবগুলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম এবং ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে অনেকেই google এ সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম এবং ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ন – মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির খাবার ও দোয়া
ইসবগুলের ভুসি কি?
ইসব গুল্ম প্রজাতির একটি গাছ। এর ফুল ছোট হয় সঠিকভাবে বলতে গেলে বীজের খোসার গুড়া যাকে আমরা ইসুবগুলের ভুষি বলে জানি। বিদেশি বাজারে এটাকে সিলিয়াম হাস্ক বা গ্রীকসিলা বলা হয়। ইসুবগুল দেখতে আকারে অনেকটা গুল্ম গাছের মত বলে এর নাম এরকম। এটি একটি ঔষধি গাছ তাই এই গাছের গোড়া গুড়া হিসেবে খেলে বিভিন্ন ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
বাজারে দুই ধরনের ইসবগুল পাওয়া যায়। একটি হলো হাস্ক ভুসি আরেকটি হচ্ছে পাউডার বা গুড়া।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অনেক নিয়ম রয়েছে। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দিনে দুইবার বা তিনবার ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। যেকোনো দুই বেলা খাওয়ার পর এসব গুলের ভুষি খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম। তবে মনে রাখতে হবে ইসবগুলের ভুসি খেলে সারাদিন অন্তত দুই লিটার পানি অবশ্যই পান করতে হবে।
ইসবগুলের ভুসি খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়ার ফলে গলনালে এবং অন্ত্রের মুখ আটকে যায় এবং পরিপাকতন্ত্রে খাবারের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নিচে ইসবগুল ভুসি খাওয়ার নিয়ম বলা হল-
১। এক থেকে ২ চা চামচ ২৫০ মিলি বা এক গ্লাস পানি দিয়ে মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন। পানির সঙ্গে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খাবেন যাতে করে শরীরে ভেতরে ঢুকে এটি ফুলে যায়। এতে চিনি মেশানোর কোন প্রয়োজন নাই।
২। দু চা চামচ ভুসি ১৫ মিলি লিটার টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাবারের পরে খাবেন। এরপর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন। ডায়রিয়া জনিত রোগে এটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
৩। দু চা চামচ ইসবগুল এক গ্লাস ঠান্ডা পানির সঙ্গে খেতে পারেন। খাওয়ার পর পেট বুক জ্বালাপোড়া করা এবং পেটে গ্যাস হওয়া ফ্লাক্স রোগের উপসর্গ।
৪। ২/৩ চা চামচ ইসবগুল ২৫০ মিলি কুসুম গরম পানির সঙ্গে এক চা চামচ লেবুর রস সাথে মিশিয়ে সকালে নাস্তার পরে খেলে শরীরের ওজন কমে যায়।
ইসুবগুলের ভুষি কখন খাওয়া যাবেনা
তবে বিশেষ কিছু সময় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-
- ঘুমানোর ঠিক আগে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে ঘুমের সময় বৃহদানন্ত্রের মুখ ভুসি জমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে অবস্ট্রাকশন বলা হয়। এরকম হলে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়।
- কোন কারনে পেটে ব্যথা বমি বমি ভাব বা পেটের অন্য কোন সমস্যায় দেখা দিলে ইসুবগুলের ভুষি না খাওয়াই উচিত।
- আগে কখনো এসব গুলোর ভুসি খেয়ে শরীরে কোন ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে পরবর্তীতে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিনের কারণে পায়খানা জমে পায়ুপথের মুখ আটকে গেলে ইসবগুলের ভুষি না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে করে আরো সমস্যা হতে পারে।
- পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যায় যা এখনো পরিষ্কার নয় এ সময় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত নয়।
- বৃহদন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বলতা বা ধীর গতিজনিত কোন রোগ থাকলে
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একটানা দীর্ঘদিনের স্কুলের ভুষি খাওয়া উচিত নয়। এতে করে ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- একটানা ৩ দিন ভুসি খাওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্যের উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ইসবগুলের উপকারিতা
ইসুবগুলের বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা জানতে হবে।ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জানলেও এর উপকারিতা সম্পর্কেও সবার জানা উচিত। যেমন-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে- ইসবগুল আমাদের যে কোন ধরনের কষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যারা কলেজটিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পায়খানা সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি অন্যতম খাদ্য উপাদান। নিয়মিত সেবন করলে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
পাতলা পায়খানা দূর করতে সাহায্য করে- কিছু কিছু ক্ষেত্রে লুজ মশন বা পাতলা পায়খানার ক্ষেত্রে ইসুফগুল কাজ করে। যেমন- বিভিন্ন ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপির কারণে লুজ মোশন হয়ে থাকে। দেখা গেছে এসবগুল লুজ মোশন এর ফর্মে অনেক সাহায্য করে। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও পান করতে হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে- অনেক জায়গায় দেখা যায় ডায়াবেটিস কে ম্যানেজ করতে ইসবগুল অনেক বেশি সাহায্য করে। কেননা এটি গ্লাসেমিক ইনডেক্স কে কন্ট্রোল করতে পারে এবং হঠাৎ সুগার বেড়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডাক্তাররা বা ডাইটিশিয়ান হিসেবে ডায়াবেটিক পেশেন্টদের ইসবগুল ভুসি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে- রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে ইসবগুল অনেক সাহায্য করে থাকে। যেহেতু এটাতে ফাইবার বা আশ রয়েছে এবং মল বের হওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। তাই এটি ব্যাড কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে এবং হার্ড ডিজিজ প্রিভেনশনের ক্ষেত্রেও ইসবগুল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে- ইসবগুল নিয়মিত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ অনেক সহায়তা করে। কারণ ইসবগুল খেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি পান করতে হয় যার কারণে পেট ভরা ভরা থাকে। এতে করে খাবারে পরিমাণ কমিয়ে ফেলা যায়। ফলে চাইলে বায়ো ফাইবারে চাহিদা এতে পূরণ হয় রেগুলার ডায়টের কারণে কনস্টিপেশনে প্রবলেম যাতে না হয় সেজন্য ডাক্তার ইসবগুল সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করে- প্রস্রাবের জ্বালাপোলা অনেকেরই সমস্যা দেখা দেয়। তাদের উপকারী খাবার হলো ইসবগুল। সেটা নিয়মিত খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর হয়ে যায়। এ সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুল এর ভুসি মিশিয়ে খেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে- আমাদের দেশে বেশিরভাগই মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। ভুলভাল খাদ্যের কারণে আমাদের এই সমস্যা দেখা দেয়। এর ঘরোয়া অন্যতম উপায় ইসবগুল খাওয়া। এটি হজম শক্তি ঠিক রাখে এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখে- হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ইসবগুল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ এতে থাকা খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে এবং পাকস্থলীর সমস্যা কম হলে শরীরে হার্টের সমস্যা ও কম হয়।
ইসবগুলির ভুসি খাওয়ার অপকারিতা: ইসবগুলের ভুসি ক্ষতিকর দিক
ইসবগুলের ভুসির অপকারিতা জেনে রাখা প্রয়োজন। ইসবগুলের ভুসি খাওয়া অনেক উপকারিতা থাকলেও তেমন কোন এক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে অতিরিক্ত ইসুবগুলের ভুসি খেলে বা অনেক দিন টানা খেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। যেমন-
- বমি হওয়া
- পেট ফোলা
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেওয়া
- বুকে ব্যথা
- হজমের সমস্যা হওয়া
- শ্বাসকার্যে সমস্যা
- চুলকানি
- চামড়া লাল হওয়া
- ফুসকুড়ি ওঠা
- মুখ এবং গলার চারপাশ ফোলা ফোলা ভাব হওয়া
- এলার্জি সমস্যা ও দেখা যেতে পারে
ইসুবগুলের ভুষি কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়
অনেকেই ইসবগুলের ভুসি রাতে ভিজিয়ে রাখেন। এতে করে ইসবগুলের ভুসি ফুলে গেলে পরে সেগুলো সর্বদা অন্যান্য খাদ্য বস্তুর সাথে মিশিয়ে খান। কিন্তু এটা কখনোই করা যাবে না। ইসবগুল এর ভুসি অনেকক্ষণ ভিজিয়ে না রেখে পানি দিয়ে গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলতে হবে। এতে করে বসে কার্যকারিতা বহু গুন বেড়ে যায়।
ঘুমানোর ঠিক আগে আগেই ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে কিনা সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। সাধারণত গর্ভাবস্থায় অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা দেখা দেয়। তখন ডাক্তার রোগীকে আশ জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই গর্ভাবস্থায় যদি পরিমিত পরিমাণ ইসবগুলের ভুসি খাওয়া হয় এবং সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া হয় তাহলে এ সমস্যা দূর করতে খাওয়া যেতে পারে।
তবে এ অবস্থায় যে কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিবেন।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
আজকে আমরা ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি। সম্পর্কে আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রী কে?
- নিয়মিত দুধ খাওয়ার উপকারিতা
- সেক করলে কি হয়? সেক এর উপকারিতা অপকারিতা