আকিকার দোয়া
আমাদের মুসলমানদের ধর্মানুসারে শিশু জন্মের পরবর্তী সময়ে তার নাম রাখার জন্য বা তার নাম রাখার উদ্দেশ্যে যে পশু জবাই করে করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সে কাজ করা কে আকিকা বলা হয়। অনেকেই আকিকার সঠিক নিয়ম আকিকার দোয়া এবং আকিকার উদ্দেশ্য ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানেনা।
আজকে আমরা তাদের জন্য আকিকার দোয়া অর্থসহ আকিকার উদ্দেশ্য আকিকার নিয়ম এবং আকিকার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই আর্টিকেলটি স্কিপ না করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আরো পড়ুন – BDTGmae online earning
আকিকা কি?
আকিকা শব্দের অর্থ কেটে ফেলা। সন্তানের কল্যাণের জন্য সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আল্লাহ খুশির জন্য পশুর জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। আকিকা করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আকিকা করা শরীয়তে সুন্নত। আকিকার করলে যেমন সোয়াব পাওয়া যায় তেমনি আল্লাহর রহমতে সন্তান বিপদ আপদ থেকে সব সময় নিরাপদ থাকে। তাই আমাদের উচিত অবশ্যই আকিকার দোয়া এবং নিয়ম-কানুন মেনে সন্তানের আকিকা দেওয়া।
আকিকার ইতিহাস
হাদিসে আছে জাহিলি যুগে আমাদের কারো সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার পক্ষ হতে একটি বকরি জবে করা হতো এবং তার রক্ত শিশুর মাথায় মাখিয়ে দেওয়া হতো। অতঃপর ইসলাম আসার পর আমরা শিশু জন্মের সপ্তম দিনে বকরি জবে করি এবং শিশুর মাথা মুন্ডন করে সেখানে জাফরান মাখিয়ে দেই। (তিরমিজি)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, হাদিসে এসেছে যে হাসানের আকিকার দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কন্যা ফাতেমাকে বলেন হাসানের মাথার চুলের ওজনে রুপা সদকা করো। তখন আমরা তা ওজন করে এবং তা এক দিরহাম বা তার কিছু কম হয়। (মিশকাত ৪১৫৪)
আকিকা করার সঠিক সময়
সাধারণত আকিকা সন্তান সন্তানের কল্যাণ এবং ভালোর জন্যই সন্তান জন্মের সপ্তম দিন করা উত্তম। তবে সপ্তম দিনে করা সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ অথবা ২৮ তম দিনেও আকিকা করা যায়। তবে অনেকের মতানুসারে সামর্থ্য না থাকলে যে কোন সময়ে সন্তানের আকিকা দেওয়া যায় তবে সন্তানের জন্মের সপ্তম দিন আকিকা দেওয়া সুন্নত বলে শরীয়তে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও বাবা-মা সন্তানের আকিকা দিতে সামর্থ্যবান না হলে সন্তান বড় হওয়ার পরে নিজেরা চাইলে নিজেই নামেই আকিকা দিতে পারে।
আরো পড়ুন – ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
সন্তান জন্মের সপ্তম দিন যেসব কাজ করা উত্তম
মুসলিম পরিবারের সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে পিতা-মাতার চারটি কাজ অবশ্যই করা উচিত। কাজগুলো হলো-
১। সন্তানের সুন্দর একটি নাম রাখা যা শুনলেই মনে হবে সে মুসলিম বংশের সন্তান।
২। মাথার চুল ফেলে দেওয়া।
৩। মাথার চুলের ওজন পরিমাণ সোনা বারুপা দান করা।
৪। চার সন্তানের নাম রাখার জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার মাধ্যমে আকিকা করা
আকিকার দোয়া
আকিকার দোয়া হল- “আল্লাহুম্মা হাজিহি আকিকাতু ইবনি ফুলনীন দামুহবিদ্যামীহি ওয়া লাহমুহা বলাহমিহি ওয়া আজমুহা বিঁয়াজমিহি ওয়া জিলদুহা বিজিলাদিহি ওয়া শারুহা বিশারর রিহি আল্লাহুম্মাজ আলহা ফিদাআল্লি ইবনি মিনান্নার”
এরপর পড়বে, কিন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজিহি আলিউল আজিম সাতারা সামাওয়াতি বালারদা নীল লতা ইব্রাহিম হানিফা ওমা আানা মিনাল মুশরিকিন ইন্না সালাতি ওয়া নুশুকি ওমাহ ইয়াহিয়া ওয়া মামাটি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লাশারিকল্লাহু ওয়াবিজালিকা অমিরতু ও আনা আওয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আমীন কা ওয়া লাকা বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পশু জবাই করতে হবে।
আকিকার পশু যবেহকারী যদি সন্তানের পিতা না হয় তাহলে করণীয়
আকিকার দোয়া পড়ার সময় এখানে যদি সন্তানের পিতা আকিকা জন্য পশু জবাই না করে কেউ করে তাহলে ইবনে এর জায়গায় বাচ্চা এবং তার পিতার নাম বলবে। মেয়ে হলে বলবে এবং দামু নাজমু আজমু জিলধু পড়তে হবে।
আকিকার নিয়ম কানুন
আকিকার দোয়া জানার পাশাপাশি আকিকার সঠিক নিয়মকানুন জানতে হবে। নিচে সহজ ভাবে বর্ণনা করা হলো-
আকিকার পশুর ধরন- যেসব পশু দিয়ে কুরবানী শুদ্ধ হয় না সেসব পশু দিয়ে আকিকাও শুদ্ধ হয় না। তাই আকিকার ক্ষেত্রে পশুর বয়স এবং ধরনের দিক থেকে কুরবানীর পশুর মতই যাচাই-বাছাই করতে হবে অর্থাৎ কোন অসুস্থ বা অতিরিক্ত ছোট পশু আকিকার জন্য নির্বাচন করা যাবে না। দেখতে সুন্দর ভালো এবং সুস্থ পশু আকিকার জন্য নির্ধারণ করতে হবে।
ছেলে সন্তানের জন্য আকিকা- ছাগল ভেড়া বা দুম্বা আকিকা দিলে ছেলে সন্তানের জন্য যেকোনো দুটি দিতে হবে। অথবা গরু মহিষ বা উট আকিকা দিলে ছেলে সন্তানের জন্য গরু মহিষ অথবা উটের দুই অংশ আকিকা দিতে হয়।
মেয়ে সন্তানের জন্য আকিকার নিয়ম- ছাগল ভেড়া অথবা দুম্বা আকিকা দিলে মেয়ে সন্তানের জন্য ছাগল ভেড়া অথবা দুম্বার যে কোন একটি অথবা গরু মহিষ বা ও আকিকা দিলে মেয়ে সন্তানের জন্য গরু মহিষ বা উটের একাংশ আকিকা দিলেই যথেষ্ট হবে। হাদিসে আছে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়ের সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবাই করাই যথেষ্ট। (আবু দাউদ ও নাসাঈ)
আরো পড়ুন – শুভ বিবাহ বার্ষিকী স্ট্যাটাস বাংলা ফেসবুক ক্যাপশন
কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
কুরবানীর পশুর সাথে আকিকার অংশীদার হওয়া যায়। কুরবানীর শরীফ তিনটি হলে সেখানে আর দুইটি শরিক আকিকার জন্য দেয়া যাবে। কুরবানির মত একই পশুতে একাধিক শরিক হয়ে আকিকা আদায় হয়ে যাবে। আবার গরু মহিষ উট এরকম বড় পশুতে ছেলেদের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম
কুরবানীর সাথে আকিকার অংশীদার হওয়া যাবে। তেমনি এটি কাঁচা এবং রান্না দুইভাবেই আকিকার গোস্ত কুরবানী গোশতের মতো বন্টন করা যায়। তবে আকিকার গোস্ত কুরবানী গোশতের মতো তিন ভাগ করে বন্টন করাই উত্তম। আকিকার মাংস সবাই খেতে পারে ধনী-গরীব ফকির মিসকিন আত্মীয়-স্বজন সকল শ্রেণীর মানুষ মিলেই এই আকিকার মাংস খেতে পারবে।
এমনকি নিজের বাবা মা নানি নানি আত্মীয়-স্বজন মিলেও খাওয়া যাবে। তবে আকিকার সবচেয়ে ভালো হয় কোন ইয়াতিমখানায় এতিমদের অথবা গরিবদের খাইয়ে দিলে আল্লাহও বেশি খুশি হয় এবং আকিকা ও সহি ভাবে পালন করা হয়।
মৃত সন্তানের আকিকা
অনেকেরই সন্তান জন্মের সাথে সাথে মারা যায় অথবা সন্তান জন্মের কয়েকদিন পর এই সন্তান মারা যায়। যার ফলে তার আকিকা কিভাবে দিতে হয় তা অনেকেই সার্চ করে থাকে। সাধারণত জীবিত ব্যক্তির বা জীবিত সন্তানের জন্যই আকিকা দিতে হয় মৃত সন্তানের জন্য আকিকা দিতে হয় না। যেহেতু তার মৃত্যু হয়েছে সেহেতু শরীয়তের সকল প্রকার বিধান তার উপর থেকে উঠে গেছে। মৃত্যুর পরে তার আকিকা করার কোন প্রয়োজন নেই।
আকিকার কুসংস্কার
অনেকে মনে করেন যে আকিকার মাংস দাদা-দাদি ও নানা-নানি খেতে পারে না। এ ধারণা ভিত্তিহীন এজন্য সঠিক সম্পর্কে সঠিক নিয়ম কানুনের জ্ঞান থাকা উচিত। যাতে কুসংস্কার বিশ্বাস না করে। আবার অনেকেই মনে করে সন্তানের মাথার চুল ফেলার জন্য মাথার উপরে খুর টানা হবে ঠিক সেই মুহূর্তে আকিকার জন্তু জবাই করতে হয়।
এটাও ভিত্তিহীন মাথা ন্যাড়া করার আগে পরে যে কোন সময় আকিকার পশু জবাই করা যায়। এক হাদিসে রয়েছে হযরত আতাউর রাহমাতুল্লাহি থেকে বর্ণনা মতে আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা ন্যাড়া করা উত্তম।
আকিকার বিধান
আকিকা করা সুন্নত। সাবিহি এবং ফকির বিদ্বান সকলেই একমত।হাসান বলেন কেননা এটি জাহিলি যুগের নিয়ম ছিল। কেউ কেউ বলেন এটি তাদের কাছে ইচ্ছার বিষয়। নিঃসন্দেহে এটি প্রাক ইসলামী যুগে চালু ছিল কিন্তু তার উদ্দেশ্য এবং ধরন পৃথক ছিল। ইসলাম আসার পর আকিকার রেওয়াজ শুদ্ধ করে রাখা হয়।
কিন্তু তার উদ্দেশ্য এবং ধরনের পার্থক্য হয়। জাহিলি যুগে আশুরার সিয়াম চালু ছিল ইসলামী যুগেও তা অব্যাহত রাখা হয়। অতএব প্রাক ইসলামী যুগে আকিকা ছিল বিধায় ইসলামী যুগে সেটা করা যাবে না এমন কথা ঠিক নয়।
আকিকার গুরুত্ব এবং ফজিলত
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন সন্তানের সাথে আকিকা জড়িত অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করা এবং তার থেকে কষ্ট দূর করে দাও। অর্থাৎ তার জন্য একটি আকিকার পশু জবে করে এবং তার মাথার চুল ফেলে দাও। (বুখারী মিশকাত ৪১৪৯)
২। রাসুল সালাম বলেন প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সাথে বন্ধক থাকা। তাই একজন সন্তানের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে আকিকা করতে হয়। তার নাম রাখতে হয় এবং তার মাথা মুন্ডন করতে হয়। (আবু দাউদ তিরমিজি ১১৬৫)
৩। ইমাম খাত্তাবী বলেন আকিকার সাথে শিশু বন্ধক থাকে কথার ব্যাখ্যায় ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহ বলেন যদি বাচ্চা আকিকা ছাড়াই শৈশবে মারা যায় তাহলে সে তার পিতা-মাতার জন্য কিয়ামতের দিন শাফায়াত করবে না। কেউ বলেছেন যে অবশ্য করণীয় এবং অপরিহার্য বিষয় সেটা বোঝানোর জন্যই এখানে বন্ধক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
আকিকার পশু জবাই করার দোয়া
আকিকার দোয়া জানলেও অনেকেই পশু জবেহের দোয়া জানেনা। বিভিন্ন দোয়া আছে নিচে তা দেওয়া হল-
“আল্লাহুম্মা আমীনকা ওয়ালাকা আকিকতা ফুলান ।বিসমিল্লাহী ওয়াল্লাহু আকবার” । জবে করার সময় ফুলানোর স্থলে বাচ্চার নাম বলা যাবে।
আকিকা সম্পর্কে বিভিন্ন মাসআলা
১। আকিকা এবাদতের জন্য কোন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করা যাবে না।
২। এই উপলক্ষে আত্মীয় বন্ধুদের কাছ থেকে কোন উপহার নেওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোন দলিল পাওয়া যায় না।
৩। আকিকা এবং কুরবানী দুটি পৃথক ইবাদত একটি পশুতে কোরবানি এবং আকিকা দুটি একসাথে করার কোন দলিল নেই।
৪। পিতার সম্মতিক্রমে অথবা তারা বর্তমানে দাদা চাচা নানা মামা যে কোন অভিভাবক তাকে দিতে পারেন। হোসাইন এর পক্ষে তার নানা আকিকা দিয়েছিলেন।
মন্তব্য
আজকে আমরা আকিকার দোয়া আকিকা সম্পর্কে বিভিন্ন মাসয়ালা এবং আকিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি যারা আকিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান আর্টিকেলটি তাদের অনেক ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। নতুন নতুন সব ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- শুভ বিবাহ বার্ষিকী স্ট্যাটাস বাংলা ফেসবুক ক্যাপশন
- শিলং তীর হিট নাম্বার, শিলং নাইট তীর ফেসবুক
- bmet check – অনলাইনে বিএমইটি চেক করার উপায়