শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের করনীয়
বাচ্চাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে মায়ের কোন বিকল্প নেই। সব মায়েরাই তাদের সন্তানের মঙ্গল এর জন্য ভিন্নভাবে চেষ্টা করে থাকেন। তবে অনেকেই শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের করনীয় কি বা মায়ের করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
এছাড়াও শিশুর মানসিক বিকাশে বিকাশের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো কিভাবে করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – মিশরীয় মেয়ে শিশুর নাম, মিশরের মেয়েদের ইসলামিক নাম
গুড প্যারেন্টিং এর সুবিধা
বাবা মা যদি সন্তানের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করে এবং সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ গড়ে তোলে তাহলে শিশুর ব্যক্তিত্ব জীবন-যাপনের ধরন নৈতিকতা সততা পছন্দ এবং সামগ্রিক আচরণে ভিত্তি স্থাপন করে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর সৎ এবং ভারসাম্যপূর্ণভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গুড প্যারেন্টিং এর সুবিধা গুলো হল-
- জন্ম থেকে যেসব শিশুরা তাদের পিতা মাতার সাথে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে সহজে অন্যদের সাথে সুখী এবং আনন্দময় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
- ভালো প্যারেন্টিং শিশুর মানুষই ভাষাগত এবং আবেগপ্রবণতার সঠিক বিকাশ ঘটে।
- যেসব শিশুরা তাদের পিতা-মাতার সাথে নিরাপদ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বড় হয় তারা মানসিক চাপের মধ্যেও কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে।
- গুড প্যারেন্টিং শিশুকে আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসের করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
- সন্তান এবং পিতা-মাতার মধ্যে স্বাস্থ্যকর সাবলীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পৃক্ততা সন্তানের সামাজিক ও শিক্ষাগত দক্ষতা থাকে সুন্দর করে তোলে।
- পিতা-মাতা শিশুর সাথে নিরাপদ সংযোগ স্থাপন করতে পারলে উভয়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে করে শিশুরা কঠিন সমস্যার সমাধানে দক্ষতা অর্জন করে।
শিশুর মানসিক বিকাশে সহজ ঘরোয়া উপায়
সুস্থ পরিবেশ- শিশু যখন বড় হয় তখন চারদিকের পরিবেশে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রভাব শিশুর জীবনে লক্ষ্য করা যায়। তাই শিশু সামগ্রিক বিকাশ বা মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য শিশুর সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করার জন্য বাবা-মা সহ পরিবারের সব সদস্যদের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সৃজনশীল খেলনা- শিশুদের খেলনা পুতুল বা গাড়ি এসব দেওয়ার চাইতে শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কার ধর্মী নাটকীয় এবং সৃজনশীল। বয়স অনুপাতে বাজারে শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ উপযোগী বিভিন্ন খেলনা পাওয়া যায়। বাচ্চার খেলার জন্য সেসব খেলনা কে নির্বাচন করতে হবে। ঘরে বাইরে দুই জায়গায় খেলা যায় এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিষয় বিকাশে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে যাতে করে তার বুদ্ধি বাড়ে যেমন পাজল ছবি আঁকা সহ বিভিন্ন খেলনা।
ছবি আঁকা- বাচ্চারা ছবি আঁকতে খুবই পছন্দ করে তাছাড়া গবেষণা দেখা গেছে শিশুরা যদি ছোটবেলায় ছবি আঁকার সুযোগ পায় তাহলে সেসব অনেক মেধাবী এবং বুদ্ধিমান হয়। ছবি আঁকার মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাদের মধ্যে অভিনব চিন্তার আবির্ভাব হয় এবং শিশু শিল্পচর্চার ও সুযোগ পায়। তার মধ্যে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায় তাই বাচ্চা সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য বাচ্চাকে ছবি আঁকতে দিতে হবে।
সংগীত চর্চা- সংগীত যে কারো মানুষেরই মনোরঞ্জন করে। তেমনি শারীরিক মানসিক রূপ অনেক প্রভাব পড়ে শিশু ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করানো জরুরী সংগীত মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে থাকে। তাই শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধি এবং শিশু সুস্থ মানুষের বিকাশের জন্য ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের সৌমিক চর্চা করতে দেওয়া উচিত। সংগীত শুনলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যা কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুকে আগ্রহী করে তোলে।
বই পড়া- শিশুকে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। কেননা বই শিশুর মানে সত্য ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে সময় মানুষ মুখে মুখে গল্প শুনেই সময় কাটাতো কিন্তু বর্তমানে শিশুদের গল্পের বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। শিশুর ছোটবেলা থেকে সেসব বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে শিশুর মানসিক বিকাশ প্রসারিত হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বন্ধুর মত আচরণ- শিশুদের সাথে সব সময় বন্ধু ১৬ আচরণ করতে হবে শিশুর মানুষের বিকাশের ক্ষেত্রে এই বন্ধুত্তপুর্ন আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শিশুরা বন্ধু মত আচরণ পছন্দ করে এবং যারা সুন্দরভাবে কথা বলে তাদের কাছে বেশি যেতে পছন্দ করে এবং তাদের কমান্ডো ফলো করে। তাই শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশে আচরণ করতে হবে।
শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা
সাধারণত শিশুর মানসিক বিকাশে বাবা-মা দুজনেরই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বাবা ঘরের বাইরে থাকে বলে শিশুর মানসিক বিকাশে কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মায়েরা সবসময় শিশুদের সাথে থাকে তাই শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভুমিকাই বেশি। নিচে বর্ননা করা হল-
নিজের মানসিক শান্তির যত্ন নিন- আপনি যদি আপনার সন্তানকে মানসিকভাবে সুস্থ দেখতে চান এবং সুন্দর মানসিক মানসিকতা নিয়ে বড় হয়ে উঠতে দিতে চান তাহলে সর্বপ্রথম নিজের মানসিকতা সুন্দর করতে হবে এবং নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হবে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সবার আগে তার স্বাস্থ্যকর পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর এজন্য মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে।
সম্পর্কে বিশ্বস্ততা- পিতা-মাতা হিসেবে নিঃসন্দেহে আপনি হলেন আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে নির্ভরতার স্থান। এ বিষয়টি আপনার সন্তানকে অনুধাবন করতে দিন। আপনার বিশ্বস্ততা আপনার সন্তানকে আপনার সামনে নিজেকে মেলে ধরতে সাহায্য করবে।
শিশু সুলভ আচরণ মেনে নিন- শিশুরা শিশুদের মধ্যে আচরণ করবে তাদের কাছ থেকে আপনি বড়দের মতো আচরণ আশা করবেন না। বিশেষজ্ঞের মতো একটি শিশুর মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লাগতে পারে। তাই তাদের অবাধ্য আচরণে ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না। তাদের ভুলগুলো শুধরে দিয়ে তাদেরকে সম্ভাব্য ক্ষতির ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।
উপহাস না করা- শিশুদের আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশি প্রবল হয়। তাই তাদেরকে এমন কিছু বলা যাবে না যাতে তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। কেননা শিশুরা বেশি ভুল করবে তাদের ভুল সফলতাকে উপহাস করা যাবে না বরং উৎসাহ দিতে হবে যেন তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে না যায়।
নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করতে দেন- শিশুকে সবসময় নিজের ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশ করতে দিবেন। আপনার অভিমত বা ইচ্ছা সব সময় শিশুর উপর চাপিয়ে দেবেন না। শিশুদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দিন এতে তারা ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং নিজের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিতে শিখবে।
শিশুর বেড়ে ওঠার ধাপগুলো সম্পর্কে জানুন- জন্ম থেকে শুরু করে শিশুরা বিভিন্ন ধাপে বেড়ে ওঠে। বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন রকম আচরণ করে এই ধাপ গুলো সম্পর্কে জানুন এবং সে অনুযায়ী শিশু সাথে সুন্দর আচরণ কর। বিশেষ করে বয়সন্ধিকালে শিশুর প্রতিবেশীর সংবেদনশীল হোন দেখবেন শিশুর মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণভাবে সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস করে তুলুন- শিশুর মানসিক বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস খুবই জরুরি। যেমন কিছুদিন কিছু সময় দিনের শরীর চর্চা করা নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো জেগে ওঠা প্রতিবেশীর সাথে মিশে চলুন। সবার সাথে কিভাবে মিশতে হয় সে সম্পর্কে শিশুকে শিক্ষা দিন এতে করে সন্তানের মানসিক বিকাশে এসব অভ্যাস বিশাল বড় ভূমিকা রাখবে।
শিশুকে সময় দিন- সাধারণত শিশুরা নিজের পছন্দের বা কাছের মানুষদের থেকেই সময় বেশি চায়। যেমন তাদের সাথে কেউ খেলবে কথা বলবে অথবা একসাথে গল্প করবে তাই দিনশেষে সন্তান আপনার তাই দায়িত্ব আপনার। বেশিরভাগ সময় পিতারা চাকরিজীবী হয় বলে মায়েরা সন্তানের কাছাকাছি থাকে। তাই আপনার শিশুকে মা হিসেবে প্রচুর সময় দিন এতে করে শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ ঘটবে।
শিক্ষামূলক বই- শিশুদের মেধাবিকাশের জন্য শিশু বয়স থেকেই তাকে শিক্ষামূলক বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গল্পের বই পড়লে মানুষ শিশুদের মানসিক বিকাশ প্রসারিত হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ে।
শিশু মানসিক বিকাশে পরামর্শ
- শিশুর সামনে কখনো স্মোকিং করা যাবে না
- শিশুকে খেলতে বাধা দেওয়া যাবে না
- সব সময় শিশুর প্রতি ইতিবাচক সংবেদনশীল হন
- শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন
- বাড়িতে শিশু বান্ধব নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলুন
- শিশুর মন খারাপ হলে জড়িয়ে ধরুন তাকে কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দিন
- প্রথম দুই থেকে তিন বছর খুব বেশি থাকে তাই শিশুর প্রতি যত্নশীল হন
- শিশুকে ভালো কাজের উৎসাহিত করুন
- তার কাজের বেশি বেশি প্রশংসা করুন
- মেধাবিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন
- শিশুর আবিষ্কারের ধর্মী এবং সৃজনশীল এবং বয়স উপযোগী খেলনা থাকতে হবে
- শিশুর সমালোচনা নয় ভুল ধরা যাবে না
- শিশুকে শিক্ষা নেবে এমন কিছু বুঝিয়ে বলুন
- ছুটির দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুকে নিয়ে ঘুরতে যান এতে শিশু বুদ্ধি বিকাশ হবে
- শিশুর জন্য বাবা-মা একজন আইডল তাই শিশু সামনে নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করেন
- শিশুর সামনে পারিবারিক সহ কোন ঝগড়া-বিবাদ উচ্চস্বরে কথা বা অসভ্য নিয়ে আচরণ করা যাবে না
- নতুন কিছু করতে সব সময় উৎসাহ দিন
- বাচ্চাকে জোর করে কোন কিছু করাবেন না
- বকাঝকা করবেন না
- শিশুর সামনে ভালো কাজগুলো করুন
শিশুর মানসিক বিকাশে খাবার
অনেক ধরনের খাবার রয়েছে। প্রতিদিন খাবারের মেনুতে রাখলে শিশুর মানসিক বিকাশের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন-
- মটরশুটি
- শীম
- বাদাম
- খেজুর
- কিসমিস
- শর্করা
- ডিম এবং
- মুরগির মাংস
- দই
- দুধ
- চিজ
শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের করনীয়
আজকে আমরা শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের করনীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি লেখাটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –