কিডনি রোগের ঔষধের নাম
বর্তমানে মানুষের শরীরে বিভিন্ন জটিল রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম হল কিডনি রোগ। কিডনি রোগের লক্ষণগুলো জানা থাকলে কিডনি রোগের চিকিৎসা করা সহজ হয়ে যায়। অনেকে কিডনি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানেনা কিডনি রোগের ঔষধের নাম সম্পর্কে গুগলে তাই সার্চ করে থাকে আজকে আমরা কিডনি রোগের ঔষধের নাম এবং কিডনি রোগের কারণ, লক্ষণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন – ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
কিডনি রোগ কী?
কিডনি রোগ যা রেনাল ডিসিস নামে পরিচিত। অথবা এমন কোন প্রতিবন্ধকতাকে বোঝায় যা কিডনি নিয়ে সঠিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। কিডনি হলো আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করে এবং বিভিন্ন শারীরিক কাজ যেমন রক্তচাপ ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য এবং লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। কিডনি রোগের জন্য ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
আরো পড়ুন – কোন রোগের কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
কিডনি রোগের লক্ষণ
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- পা, ঘাড় বা মুখে ফোলা ভাব
- শরীরে পানি জমা
- শরীর ফোলা ভাব
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- ফেনাযুক্ত বা রক্তাক্ত রঙের প্রস্রাব
- প্রস্রাব করতে অসুবিধা
- ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া
- উচ্চ রক্তচাপ
- বমি বমি ভাব
- বমি বেশি হওয়া
- ক্ষুধামন্দ
- মুখে রুচি কমে যাওয়া
- পিঠে বা পাশে ব্যথা
- শুষ্ক বা চুলকানি যুক্ত ত্বক
- মাথা ব্যথা করা এবং মাথা ঘোরানো
- মনোনিবেশ করতে অসুবিধা বা বিভ্রান্ত হওয়া
- পেশির ক্রেন বা মুছড়ানো
- হাতে বা চোখের চারপাশে ফোলা ভাব হওয়া
- প্রস্রাব গার্ড রঙের হওয়া এবং ক্লিয়ার না হওয়া
- অস্থির পায়ের সিনড্রোম বা ঘুমের ক্ষতি হওয়া
- হৃদপিন্ডের আস্তরণের চারপাশে তরল জমা হওয়ার ফলে বুকে ব্যথা হওয়া
- হার্ট দুর্বল হওয়া
কিডনি রোগের কারণ
কিডনি রোগের ঔষধের নাম জানার আগে কেন কিডনির রোগ হয়ে থাকে সেটা জানতে হবে। বিভিন্ন রোগের কারণে কিডনি রোগ হয়ে থাকে। যেমন-
ডায়াবেটিস- হওয়ার কারনে রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার সময়ের সাথে সাথে কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ- উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যা তাদের সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। গ্লোমেরু লোন ফ্রাইডে এটি এমন একটি অবস্থা যা কিডনির ফিল্টারগুলো বিস্তৃত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিস- এটি একটি উত্তরআধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অবস্থা যেখানে কিডনিতে সিস্ট তৈরি হয়। যার ফলে সময়ের সাথে সাথে তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
মূত্রনালী প্রতিবন্ধকতা- কিডনি থেকে মূত্রাশয় পর্যন্ত প্রস্রাবের প্রবাহকে বাঁধা দেয় এমন যেকোনো কিছু সময়ের সাথে সাথে কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
জন্মগত ত্রুটি- কিছু লোক আছে তাদেরকে নিয়ে গঠনগত অসহায় অবস্থা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সময়ের সাথে সাথে কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
নেপ্রটিক সিনড্রোম- এটি এমন একটি অবস্থা যা প্রস্রাবে উচ্চমাত্রার প্রোটিন রক্তে। প্রোটিন মাত্রা কম এবং শরীর ফুলে যাওয়া দেখা দিতে পারে।
লুকাস- এটি একটি অটো ইউ মিউল রোগ। কিডনি সহ অনেক অঙ্গের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
পাইলনেফ ফ্রাইড রাইস- এটা কিডনি সংক্রমণের একটি প্রকার যা অবিলম্বে চিকিৎসা না করলে স্থায়ীভাবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
আরো পড়ুন – শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনি ভালো রাখার ঘরোয়া উপায়
১। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখুন- অর্থাৎ প্রতিদিন খাদ্যের তালিকায় সুষম খাদ্য রাখুন। যেখানে শস্য ফল শাকসবজি চরবিহীন প্রোটিন এবং কম চর্বিযুক্ত তথ্য তথ্য থাকে।
২। হাইড্রটেড থাকুন- আপনার শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে এবং আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখতে প্রচুর পানি এবং অন্যান্য তরল পান করতে হবে।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করা- নিয়মিত ব্যায়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে। যা কিডনি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা- যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আপনার রক্তে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জটিলতা প্রতিরোধ করতে সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
৫। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা- উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে আপনাকে নিয়ে অনেক ক্ষতি করতে পারে। তাই সবসময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৬। ধূমপান ত্যাগ করা- যারা ধূমপান ত্যাগ করে তাদেরকে নীরব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধূমপান রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৭। অ্যালকোহল পরিহার করা- অত্যাধিক এলকোহল পান করা কিডনির পানি শূন্যতা এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। তাই সবসময় অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হব।
৮।ব্যথা। ট্যাবলেট এড়িয়ে চলা- কিছু ব্যথা নাশোক যেমন এসপিরিন এবং আইবো প্রফেন বেশি পরিমাণে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য গ্রহণ করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
৯। নিয়মিত চেকআপ করা- স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কার সাথে নিয়মিত চেকআপ করলে কিডনির সমস্যা তাড়াতাড়ি সংযুক্ত করতে এবং কিডনিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করতে সম্ভব হয়।
১০। ভাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা- কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত আপনার হাত ধুয়ে নিন এবং সংক্রমনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
কিডনি রোগের ঔষধের নাম
, বাজারে কিডনি রোগের ঔষধ বিভিন্ন সৎ ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধি সেবন করা উচিত নয়। কিডনি রোগের ঔষধের নাম হল-
- Losartan
- Amlodipine
- Ramipil
- Furosimide
- Spironolactone
- Calcium Acetate
- Sevelamer Hydrochloride
- Alfacalcidol
- Erythropoietin
- Iron
কিডনি রোগের চিকিৎসা
- নেফ্রলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিয়মিত মেডীসিন গ্রহণ
- সুষম খাবার খাওয়া
- অনেক সময় কেন্দ্রের কারণে ডাক্তার নানা রকম খাবারের বিদেশের বিধি নিষেধ দিয়ে থাকেন সেগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা
- শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা
- জটিল কিডনি সমস্যা না থাকলে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে এক্সারসাইজ করা
- রাতে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
- সিগারেটের অ্যালকোহ ইত্যাদি বদভ্যাস ত্যাগ করা
- ব্যস্ত আর ওষুধ সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা
- প্রয়োজনীয় ডাক্তারের পরামর্শে সার্জারি করা
- যদি কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করতে হয়
কিডনি সুস্থ রাখার খাবার
- চা
- চেরি
- ব্লু বেরি
- ফলের জুস
- পালং শাক
- প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি
- প্রচুর পরিমাণে ফল
- শাকসবজি
- গোটা শস্য
- মাঝারি পরিমান প্রোটিন জাতীয় খাবার
- খনিজ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট উচ্চ যুক্ত খাবার
যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা
- অতিরিক্ত তেলে ভাজা জিনিস
- মসলা জাতীয় জিনিস
- প্রক্রিয়াজাত মাংস
- ধূমপান
- অ্যালকোহল জাতীয় খাবার
- সোডা
- ফ্রোজেন খাবার
- প্যাকেট আলু ভাজি
- ফ্রিজে অনেক দিনে রাখা কোন জিনিস
কিডনি রোগ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা প্রশ্ন এবং উত্তর
একটা কিডনি না থাকলে কি হয়?
উত্তর- শুধুমাত্র একটি কিডনি থাকা অস্বাভাবিক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ শুধুমাত্র একটি কার্যকরী কিডনি দিয়ে স্বাভাবিক এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
কিডনি সমস্যায় হলে কোথায় কোথায় ব্যাথা হয়?
উত্তর- সমস্যা হলে সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত কিডনির এগুলোর কাছাকাছি বা নিচের পিঠে বা বাম পাশে দেখা দিতে পারে।
কিডনি রোগ কি ভাল হয়?
উত্তর- কিডনি রোগ ভালো হয়। কিডনি রোগীদের মধ্যে ৯০ থেকে ৯৫% রুগী সম্পন্ন ভালো হয়। সাধারণত কিডনি রোগ ভালো হয় কিনা তা নির্ভর করে রোগীর রোগ কত তাড়াতাড়ি শনাক্ত হয়।
কিডনি নষ্ট হলে কি কি সমস্যা হয়?
উত্তর – কিডনি ব্যর্থতা যা শেষ পর্যায়ে রেনাল নামে পরিচিত। তরল জমা হওয়া, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার, রক্তস্বল্পতা, হারের ক্ষয়, স্নায়ুর ক্ষতি সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি, কারীয় ভাসকুলার রোগের ঝুকেসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টিকর্তে পারে। এছাড়াও সঠিক চিকিৎসা না হলে জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।
কিডনি সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত?
উত্তর – যদি কিডনির সমস্যায় থাকে তাহলে সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং খাবারের মধ্যে সোডিয়াম গ্রহণ কমানো এবং প্রোটিন গ্রহণ সীমিত করা উচিত। এছাড়াও উচ্চ পটাশেনযুক্ত খাবার এড়ানো এবং চিনিযুক্ত পানির সাথে হাইড্রেট এর থাকা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে পরামর্শ করতে পারেন।
কিডনি রোগ কি ভালো হয়?
রোগীর বয়স ও রোগের অবস্থার উপর নির্ভর করে কিডনি রোগ কি ভালো হয় কি না। তবে কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ফলো করলে কিডনির সমস্যা অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। যেমন –
- তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার না করা
- সবুজ শাক সবজি গ্রহন
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানিয় পরিহার
- বেশি বেশি পানি আপ্ন
- ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা
এছাড়াও উপরে আমরা কিছু ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করেছি যা ফলো করলে আশা করা যায় আপনি উপকার পাবেন। তবে অবস্থা ভাল না হলে ঘরোয়া খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কিডনি রোগের ঔষধের নাম
আজকে আমরা কিডনি রোগের ওষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি কিডনি রোগের ঔষধের নাম আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরাও অতি শীঘ্রই রিপ্লে দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- চোখ ওঠা রোগ কেন হয়, চোখ ওঠা থেকে মুক্তির উপায়
- চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা, চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে বিস্তারিত জানুন